শিরোনাম
শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

কাদিরের নকশিকাঁথার মাঠ

খেতের মাঝখানে রয়েছে ভালোবাসার একটি বড় প্রতীকী চিহ্ন, দুই পাশে রয়েছে দুটি নৌকা, জাতীয় ফুল শাপলা, চার কোণে আরও চারটি ভালোবাসার প্রতীকী চিহ্ন।

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

কাদিরের নকশিকাঁথার মাঠ

গল্পটা দুই যুগ আগের। তখন প্রেমের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে মাতাল এক কিশোর ও কিশোরী। মনের ভাব প্রকাশের জন্য তাদের চলত চিঠি চালাচালি। সেই চিঠির পাতার চার কোনে তিন কোনাকৃতির হৃদয় আঁকা থাকত। মাঝখানেও থাকত আরও বড় ‘হার্ট’ আঁকা। সেখানেই লেখা থাকত তাদের নাম।

 

শৈশবের এ অনুভবের পরশগুলো এখন ডানা মেলেছে। কৈশোরে সেই অনুভূতি এখন সতেজ ভূমিতে দোল দিচ্ছে। হলুদ সরিষা জমিনের ৩৫ একরজুড়ে এখন কৈশোরের ভালোবাসার আবেগের প্রতিচ্ছবি। বলছিলাম ময়মনসিংহের ঈশ^রগঞ্জ উপজেলার আঠাড় বাড়ি ইউনিয়নের কৃষক আবদুল কাদির (৪০) ও স্ত্রী মুর্শিদা আক্তারের কথা। সম্প্রতি কাদির তার নিজ কৃষি জমিতে মানসিক ভাবনা আর ভালোবাসার নিদর্শনের রূপ মাঠে ফুটিয়ে তুলেছেন। ৩৫ শতক জমিতে শৈল্পিক বুননে ফসলের মাঠকে করে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন। দূর দৃষ্টিতে দেখতে মনে হয় ‘নকশিকাঁথার মাঠ’। এলাকায় তিনি এখন ‘প্রেমিকপুরুষ’ হিসেবেও পরিচিত।

সৃষ্টিশীল কাদির জানান, ৩৫ শতক জমিতে কারুকার্যের মতো করে ফসলের মাঠকে সাজিয়েছেন। জমিতে বারী-১৫ জাতের সরিষা বীজ বপন করেন। জমিতে সেই বীজ গজানোর পর পুরো ক্ষেত যেন জীবন্ত ছবির রূপ ধারণ করে। যদিও বর্তমানে চারা বড় হয়ে যাওয়ায় আগের সেই সৌন্দর্য্য নেই। সরেজমিন তার এ শৈল্পিক মনোভাবের কথা জানতে চাইলে বলেন, কৃষি কাজকে কেউ কাজ বলে মনে করে না, কেউ সম্মানও করে না। আর এ কাজ করে তেমন কোনো আনন্দও পাওয়া যায় না। কিছুটা আনন্দ পাওয়ার জন্য আমার ফসলি জমিতে খেয়ালিপনা করে নিজের আবেগ-অনুভূতি ও আমার জীবনের কিছু স্মৃতি তুলে ধরে জমির বুকে চিত্রাঙ্কন করে সরিষা বুনি। সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রীর ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ বিখ্যাত সুরম্য তাজমহল তৈরি করেছিলেন জানিয়ে কাদির বলেন, ‘কিশোর বয়সের সেই ভালোবাসার প্রতি সম্মান দেখালাম। আমাদের সংসারে এখন এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। মাকসুদা আমার কাছে মমতাজের মতো। আমি গরিব, আমার সামর্থ্য নেই, কিন্তু আমার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার কমতি নেই।’

 

তিনি জানান, গ্রামে একটি ক্লাব আছে। আমি এ ক্লাবের উপদেষ্টা। আমার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ক্লাবের সদস্যরা এ কাজে সহযোগিতা করে। ক্লাবের কেউ একজন আমার ক্ষেতের ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়। তার পর থেকে আমার ক্ষেত নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি এমন হবে আমি ভাবিনি।

মাকসুদা বলেন, আমাদের সংসার জীবনে ২০ বছরে কোনো কলহ হয়নি। আল্লাহর রহমতে আমি আমার স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে সুখে আছি। আপনাদের কাছে দোয়া চাই। খেতের মাঝখানে রয়েছে ভালোবাসার একটি বড় প্রতীকী চিহ্ন, দুই পাশে রয়েছে দুটি নৌকা, জাতীয় ফুল শাপলা, চার কোনে আরও চারটি ভালোবাসার প্রতীকী চিহ্ন। কাদিরের কাছে জানতে চাওয়া হয় নৌকা ও শাপলা ফুলের বিষয়েও। বলেন, নৌকা হলো আমার প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও গণমানুষের প্রতীক। শাপলা হলো আমাদের জাতীয় ফুল। ফুল আমার ভালো লাগে। ভালোবাসার চিহ্ন হচ্ছে আমার জীবনের               মধুর স্মৃতি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর