শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
ভ্রমণ

ইন্দোনেশিয়ার অন্যরকম বিদ্যাপীঠে

মো. মনির হোসেন

ইন্দোনেশিয়ার অন্যরকম বিদ্যাপীঠে

বালি দ্বীপে ভ্রমণের কথা আসলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কোটা বিচ, টেম্পল বিচ, ওয়াটার ব্লু, কোকোনাট বিচ, নুসা পেনিডা ও নুসা ডুয়া কিন্তু আমার মন বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল বালির গ্রিন স্কুলের কথা। যেই কথা সেই কাজ। মলিন্দো এয়ারের একটি টিকিট কনফার্ম করে যাত্রা করলাম বালি দ্বীপের উদ্দেশে। পথিমধ্যে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে ট্রানজিট বিরতি প্রায় ৪ ঘণ্টা। এই ফাঁকে এয়াপোর্টটি এক নজর দেখে নিলাম। খুবই পরিপাটি ও নান্দনিক একটি এয়ারপোর্ট। যার জন্য ট্রানজিট বিরতির সময়টা কখন শেষ হলো বুঝতেই পারলাম না। বিরতি শেষে আবার প্লেনে চেপে বসলাম। স্থানীয় সময় দুপুর ১২.২০ মিনিটে রাজধানী ডেনপাসারে গুরা রাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলাম। ইমিগ্রেশন ফর্মালিটি সম্পন্ন করে একটি ট্যাক্সি নিয়ে রওনা হলাম সবুজ বিদ্যাপীঠের উদ্দেশে। রাজধানী ডেনপাসার শহরের মধ্য দিয়ে চলছে আমাদের বাহন। অবশেষে প্রায় ১ ঘণ্টা পর আমার পৌঁছলাম গ্রিন বালি স্কুলের গেটে। প্রধান ফটক থেকে ভিতরের দিকে দেখা যাচ্ছে অসংখ্য গাছ-পালা সমেত একটি ঘন বন আর মাঝে মাঝে কিছু কুঁড়েঘর। কোনো দালান চোখে পড়ছে না। দেখতে দেখতে একজন এসে আমার নাম ধরে খোঁজ করলেন। তাকে অনুসরণ করে ভিতরে ঢুকে পড়লাম। দেশে থাকা অবস্থায়ই তাদের ক্যাম্পাসটি পরিদর্শনের বিষটি নিশ্চিত করেছিলাম। আমার সঙ্গে গাইড হিসেবে আছেন এনথন। তিনি একজন বালিনিজ। এনথন আমাকে একটি অতিথি কক্ষে নিয়ে গেলেন। এ কক্ষের খাট থেকে শুরু করে ঘরের ছাদ সব কিছুই বাঁশের তৈরি। ঘর ও ঘরের আসবাবপত্র দেখতে দেখতে এনথন চলে আসল আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমিও বেরিয়ে পড়লাম ওর সঙ্গে। এক এক করে প্রশাসনিক কার্যালয়, শ্রেণিকক্ষ, মিলনায়তন, কেফিটেরিয়া, প্রদায়ক কক্ষ সবই ঘুরে দেখলাম। মজার বিষয় হলো এসব কিছুই বাঁশের তৈরি। বাঁশের এ স্থাপত্যশৈলীও দেখার মতো। এ নান্দনিক ও শৈল্পিক স্থাপত্য আকৃষ্ট করবে যে কাউকেই। আমি গাইড এনথনের কাছে জানতে চাইলাম এখানে কোনো ইটের স্থাপনা আছে নাকি, উত্তরে তিনি  জানালেনÑ না। তিনি আরও জানালেন এখানে প্রকৃতিকে অক্ষত রেখে, প্রকৃতিকে মূল ধরে এবং তার সঙ্গে সহাবস্থান করে কীভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় সেই প্রচেষ্টাই করা হয়। এখানে ইকোলজিক্যাল কনজারভেশনের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রাখা হয় এবং একেবারে ছোট থেকেই এ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। শিক্ষা দেওয়া হয় সবুজ ধারণের ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার। কথা বলতে বলতে চলে গেলাম কুল কুল খামারে। এ খামারটি স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবার তৈরির জন্য। নিজেদের প্রয়োজনীয় শস্য, ফলমূল নিজেরাই তৈরি করে স্কুুলটি। কীভাবে মানুষকে প্রকৃতির কাছাকাছি এনে টেকসই জীবন-যাপন করা যায় এটাই কুল কুল খামারের মূল লক্ষ্য। খামারের সঙ্গেই রয়েছে একটি ছড়া যাকে অনেক যতেœ আগলে রেখেছে। এ ছড়া পারাপারের জন্যও তারা একটি বাঁশের ব্রিজ  তৈরি করেছে। যার নাম দিয়েছে গ্রিন ব্রিজ। পুরো ক্যাম্পাস দেখে মনে হয়েছে এখানে যারা অবস্থান করছে তারা যেন প্রকৃতির কোলে আছেন। আমারও  এক প্রহর অবস্থান করার সৌভাগ্য হয়েছিল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। এখানে বলে রাখা ভালো, গ্রিন স্কুল একটি অলাভজনক বেসরকারি আন্তর্জাতিক প্রি কিন্ডারটেন থেকে হাই স্কুল যেখান থেকে প্রকৃতি, পরিবেশ ও টেকসই জীবন-যাপনের শিক্ষা দেওয়া হয়। এটি উবুদ শহরের কাছে আয়ুং নদীর তীরে বানজার সারিনে অবস্থিত। অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক জন হার্ডি ও সিনথিয়া হার্ডি স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। যারা প্রকৃতি, পরিবেশ, স্বাস্থ্যকর খাদ্য, শিক্ষা, টেকসই চর্চা করেন তারা একবার হলেও এই স্কুলটি পরিদর্শন করতে পারেন। এই স্কুলটি তাদের দর্শন মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ক্যাম্পাস গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা রেখেছে। স্কুলটির প্রকৃতি প্রেম ও টেকসই চর্চায় আমি মুগ্ধ। তবে এক প্রহরের এই ট্যুরে আমি তৃপ্ত নই। আবার যাওয়ার ইচ্ছা আছে। আপনিও সঙ্গী হতে পারেন।

 

ভ্রমণ টিপস

ইন্দোনেশিয়া যেতে এখন বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা লাগে না। তাই কোনো ঝামেলা ছাড়াই শুধু বিমান টিকিট কেটে ইন্দোনেশিয়ার বালি ভ্রমণ করতে পারবেন। ইন্দোনেশিয়া পাবলিক বাহন খুব কম। সবাই নিজ নিজ গাড়ি ও বাইকে চলাচল করে। তবে খুবই কম টাকায় এসি জিপ সারা দিনের জন্য রিজার্ভ করা যায়। ইন্দো রুপি সাত থেকে আট লাখে সারা দিন একটি জিপ ভাড়া করতে পারবেন যা বাংলাদেশি টাকায় ৪২০০ টাকা থেকে ৪৮০০ টাকা হবে। ৪ রাত থাকতে পারলে পুরো বালির উল্লেখযোগ্য স্পট ভ্রমণ সুন্দরভাবে সম্পন্ন হতে পারে। এখানে সিফুড কম মূল্যে খেতে পারবেন। ইন্দো ট্রেডিশনাল ড্রেস বাটিক পাবেন তুলনামূলকভাবে কম দামে। বিশ^মানের কফি পাবেন কম দামে। ডুইরিয়ান, ড্রাগন, রামবুটান ও সালাক ফল খেতে পারেন।

 

কোথায় থাকবেন

গ্রিন স্কুলে ১০টি গেস্ট রুম রয়েছে। তবে অনেক আগে বুকিং করতে হয়। তাছাড়া উবুদ শহরে হোটেল রিসোর্টের অভাব নেই। স্কুল থেকে মাত্র ১০-১২ মিনিটের রাস্তা। ভাড়া সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা।

 

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বালি সিঙ্গাপুর, মালিন্দো অথবা মালয়েশিয়ান এয়ার লাইনসে যেতে পারবেন। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে সিঙ্গাপুর ট্রানজিট হবে আর বাকি দুটির ক্ষেত্রে কুয়ালামপুর ট্রানজিট হবে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার ভ্রমণ। সব মিলিয়ে বিমান ভাড়া হতে পারে ৩০,০০০-৪৫,০০০ টাকা।

সর্বশেষ খবর