শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
আয়োজন

অন্যরকম গায়ে হলুদ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

অন্যরকম গায়ে হলুদ

সবাই গার্মেন্ট কর্মী। কেউ দিলেন ৫০, কেউ ২০, কেউ ১০০ বা ২০০ টাকা। সবার অংশগ্রহণে বড় হয়ে গেল টাকার অঙ্কটি। অতঃপর দেড় লাখ টাকায় কেনা হলো সোনার গয়না। সেই গয়না উপহার হিসেবে দেওয়া হলো গার্মেন্টের মালিকের কন্যাকে। তারাই মালিকের কন্যার গলায় পরিয়ে দিলেন  সোনার গয়না। গায়ে হলুদে গার্মেন্টকর্মীদের হৃদয়ভরা ভালোবাসায় সিক্ত হলেন নববধূ। এমন বিরল দৃষ্টান্তের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান হয়েছে চট্টগ্রামে। গত ২ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার ইন্ডিপেনডেন্ট গার্মেন্টের ছাদে এ গায়ে হলুদ অনুষ্ঠিত হয়। গায়ে হলুদে অংশগ্রহণ করেন গার্মেন্টে কর্মরত প্রায় দেড় হাজার কর্মী। সপরিবারে ছিলেন গার্মেন্ট মালিকও। পুরো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা করেন গার্মেন্ট কর্মীরাই। ছিল না কোনো শ্রেণি-বৈষম্য। কেবল গায়ে হলুদ নয়, বিয়ের অনুষ্ঠানেও অব্যাহত ছিল বিরল দৃষ্টান্তের ছাপ। বিয়ে অনুষ্ঠানেও শ্রমিক-মালিক একাকার হয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন। গার্মেন্ট কন্যাদের সরব উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে অন্যরকম মাত্রা দেয়।

 

জানা যায়, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার ইন্ডিপেনডেন্ট গার্মেন্টের মালিক, ব্যবসায়ী নেতা, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি এস. এম আবু তৈয়বের একমাত্র কন্যা সাইকা তাফাননুম প্রীতি। প্রীতির গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয় গার্মেন্টের দেড় হাজার নারী শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে। প্রীতির বিয়ে হয় ঢাকার বারিধারার আসলাম মোল্লা ও রুবিনা মোল্লার পুত্র শফিউল ইসলাম মোল্লা (নিলয়) এর সঙ্গে। গত ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের নেভি কনভেনশন সেন্টারে এই বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। বিয়ে অনুষ্ঠানেও সরব উপস্থিতি ছিল শ্রমিকদের। আমন্ত্রণ জানানো হয় প্রায় দুই হাজার অতিথিকে।

 

এস. এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘গার্মেন্টকর্মীদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফলেই আমরা আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। আমি, আমার সন্তান ও পরিবারের ওপর শিল্প কারখানার খেটে খাওয়া শ্রমিকদের যথেষ্ট ভূমিকা আছে। এরাই তো আমাকে এবং আমার সন্তানকে একটি মর্যাদার আসন দিয়েছেন। তাই আমি মনে করি, এরা আমার পরিবারের অংশ। তাই মেয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটি আমি তাদের সঙ্গে করেছি।’ তিনি বলেন, ‘নানা ব্যবস্থায় শ্রমিকদের সঙ্গে খাবার সুযোগ হয় না। তাই বিয়ে উপলক্ষে একদিন সবাই মিলে এক সঙ্গে খাওয়ার সুযোগ হলো। সবার কাছে আমরা একটাই প্রার্থনা, তারা যেন আমার পরিবার এবং আমার মেয়ের জন্য দোয়া করেন। তাদের দাম্পত্য জীবন যেন জীবন সুখী হয়।’ কিন্তু গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানটি গতানুগতিকতাকে ছাপিয়ে যায়। আলোচনার শীর্ষে থাকে সপ্তাহজুড়ে। সবার মুখে মুখে ফেরে- গার্মেন্ট মালিক উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ। অথচ নিজ মেয়ের বিয়ের গায়ে হলুদে নিজ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এটি বিরল মানসিকতার পরিচয়। আলোচনাটি কেবল মুখে মুখে নয়, স্থান দখল করে ভার্চুয়াল জগতেও। অনলাইন খুললেই শোভা পাচ্ছিল ওই অনুষ্ঠানের স্থির ও ভিডিও চিত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন অনেকেই। আলোচনার কেন্দ্রে থাকে শ্রমিকের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটি।

 

হামিদ হোছাইন আজাদ নামের একজন লিখেছেন, ‘ইন্ডিপেনডেন্ট গার্মেন্টের মালিকের চিন্তা চেতনা এবং মানসিকতার প্রশংসা করা যায়। তিনি নিজের কন্যার গায়ে হলুদে সবার জন্য অভিন্ন পোশাক এবং খাবারের আয়োজন করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’ নিরাপদ সড়ক চাই চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদ সজীব বলেন, ‘গায়ে হলুদ ও বিয়ে অনুষ্ঠানটি শ্রেণি-বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সমাজের বিত্তবানরা এভাবে সবার সম্মিলিত উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান আয়োজন করলে বৈষম্য নিরসন হবে।’ বিরল দৃষ্টান্তের গায়ে হলুদে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সব নারী শ্রমিককেই দেওয়া হয়েছে হলুদ শাড়ি। আবার অভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি নেওয়া হয়েছে নিজের স্ত্রী উলফাতুন্নেছা পুতুলের জন্য। পক্ষান্তরে শিল্প প্রতিষ্ঠানের পুরুষকর্মীদের দেওয়া হয়েছে একই ডিজাইন ও রংয়ের পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবি পরেছেন মালিকের সন্তানও। গায়ে হলুদের খাবার রান্না করা হয়েছে চট্টগ্রাম ক্লাবের বাবুর্চি দিয়ে। খাবারের মেনু ছিল চট্টগ্রাম ক্লাবের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর