শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
আবিষ্কার

এইচআইভি লড়াইয়ে সাফল্য

শনিবারের সকাল ডেস্ক

এইচআইভি লড়াইয়ে সাফল্য

এইচআইভি, যা এইডস নামে পরিচিত। এটি একটি মরণব্যাধি। এখন পর্যন্ত এই রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি বিজ্ঞানীদের জন্য। তবে এবার সাফল্য ধরা দিয়েছে বিজ্ঞানীদের হাতে। আর তা হচ্ছে, প্রথমবারের মতো জীবন্ত প্রাণীর জিনোম থেকে এইচআইভি ভাইরাস অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। যদিও এটি প্রতিষেধক নয়, ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের একটি উপায় মাত্র। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এটি এইচআইভি বিরোধী শক্তিশালী একটি ওষুধ, এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ ভালো কাজ করতে পারে। ঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এই অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ড্রাগস (এআরভিস) এইচআইভিকে এতটাই দমিয়ে রাখতে পারে যে, রক্তে এই ভাইরাস শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে যায়। ফলে শারীরিক সম্পর্ক বা ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। কিন্তু এআরভিস’র কার্যক্ষমতা শুধু এতটুকুই। যেসব ভাইরাস সক্রিয়ভাবে নিজেদের কপি তৈরি করছে এবং সুস্থ কোষকে আক্রান্ত করছে-সেগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের ওষুধ ভালো কাজ করে। এইচআইভি বিবর্তন হওয়া শিখেছে ও ওষুধের কার্যকারিতা রোধে নিজেদের পরিবর্তন করতে পারে। লসিকা ও শরীরের অন্যান্য টিস্যুতে লুকিয়ে থেকে, নিষ্ক্রিয় থাকার মাধ্যমে এবং কপি না করে নিজেদের সংরক্ষণ করতে পারে এইচআইভি। যখন রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা কিছুটা ঢিল দেয় তখন আবারও নিজেদের কপি করা শুরু করে এই সুপ্ত ভাইরাসগুলো। এর অর্থ হচ্ছে, কোনো এক ব্যক্তি একবার আক্রান্ত হলে এই ভাইরাসগুলো তাদের শরীরের খোলা গ্রেনেডের মতো রয়ে যায়; পরে লাখ লাখ আক্রান্ত ভাইরাস বছরের পর বছর বা দশকের পর দশক অপেক্ষা করে রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে ছাপিয়ে যেতে।

এআরভিএস-র চেয়ে এসব ভাইরাস খুঁজে বের করে অপসারণ          করা সবচেয়ে ভালো সমাধান। কিন্তু এখনো পর্যন্ত গবেষকরা

এমনটা করতে সক্ষম কোনো প্রতিষেধক বা অন্য কিছু তৈরি করতে পারেনি। গত বছর ২ জুলাই ন্যাচার কমিউনিকেশন্সে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, একটি আক্রান্ত প্রাণীর জিনোম থেকে এইচআইভি অপসারণ করার নতুন একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ২৯টি ইঁদুরের ওপর ওই গবেষণা চালিয়ে এমন দাবি করেছেন গবেষকরা। ভাইরাসের সক্রিয়তার মাত্রা কমিয়ে রাখতে কয়েকটি ইঁদুরের ওপর মডিফাইড এআরভি ট্রিটমেন্ট এবং শক্তিশালী জিন-এডিটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে আক্রান্ত কোষ থেকে এইচআইভি জিন অপসারণে সক্ষম হয়েছেন তারা। বেশ কয়েকটি টেস্টের পর দেখা গেছে, পরীক্ষা চালানো ৩০ শতাংশ প্রাণীর শরীরে এইচআইভির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। টেম্পল ইউনিভার্সিটির লুইস কাটজ স্কুল অব মেডিসিন অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব নেবরাস্কা মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক ও এই গবেষণার অন্যতম লেখক কামেল খলিলি বলেছেন, এই পর্যবেক্ষণ আমার জানা মতে প্রথমবারের মতো দেখিয়ে যে এইচআইভি একটি আরোগ্যযোগ্য রোগ। প্রথমে লেজার আর্ট নামের একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মডিফাই করা প্রচলিত এআরভি ওষুধ ব্যবহার করে সক্রিয়ভাবে কপি করতে থাকা ভাইরাসের পরিমাণ কমিয়ে আনেন গবেষকরা। এই গবেষণার আরেক প্রধান লেখক ও ইউনিভার্সিটি অব নেবরাস্কা মেডিকেল সেন্টারের ফার্মাকোলজি অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল নিউরোসায়েন্সের চেয়ারম্যান ড. হাওয়ার্ড জেন্ডেলম্যান এই লেজার আর্ট পদ্ধতির উন্নতি ঘটান। লেজার আর্ট ও প্রচলিত এইচআইভি বিরোধী ওষুধ ব্যবহার করে কপি করতে থাকা ভাইরাসকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা। এইচআইভি বিরোধী ওষুধ যে ভাইরাল জিন-কোষগুলোকে মারতে পারেনি দ্বিতীয় পদ্ধতিতে জিন এডিটিং টুল ক্রিসপার-ক্যাস৯ ব্যবহার করে সেগুলোকে হত্যা করা সম্ভব হয়েছে। খলিলির আগে ল্যাবে মানুষ ও প্রাণীর কোষ থেকে এইচআইভি জিন সরাতে ক্রিসপার পদ্ধতির সফল ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এইচআইভি ভাইরাস হত্যা করতে ক্রিসপার পদ্ধতি এককভাবে খুব একটা কার্যকর নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর