এবার এসএ গেমসে কারাতে দল ৩টি সোনাসহ মোট ১৮টি পদক জিতেছে। এর মধ্যে ৩টি রুপা ও ১২টি ব্রোঞ্জ পদক রয়েছে। সাউথ এশিয়ান গেমসের এবারের আসরে নারীদের কারাতে প্রতিযোগিতায় (অনূর্ধ্ব-৫৫ কেজি) স্বর্ণপদক জিতেছেন মারজান। বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে এবারের আসরে তিনিই প্রথমে জিতেন এ সেরার পদক। কিন্তু ঘটে যায় দুর্ঘটনা। সোনাজয়ী এই মেয়ে কারাতের দলগত ইভেন্টের ফাইনালে লড়াই করতে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। ছুটে যায় মেডিকেল টিম। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কারাতে ফেডারেশন কর্মকর্তারা।
পদক জয়ের দিনে মারজানের খুব মনে হচ্ছিল তাঁর মা-বাবার কথা। শুরুতে মেয়ে বলে বাবা-মা রাজি ছিলেন না মেয়ে কেরাতে খেলুক। কত বাধা। কিন্তু মা-বাবার সাহায্যও তো পেয়েছেন তিনি। মারজান বলেন, ‘আমার প্রথমেই মনে পড়ছে মা-বাবার কথা। তাঁরা আমাকে সবচেয়ে বেশি বাধা দিয়েছেন।’ আর এখন এই মেয়ে উজ্জ্বল করেছে বাংলাদেশের মুখ। হয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা। কারাতের পোশাকে এমব্রয়েড করা থাকে জাতীয় পতাকা। ওই পতাকার দিকেই তাকিয়েছেন প্রতিটি লড়াইয়ের আগে। মারজান বলেন, ‘যখন খেলতে নেমেছি, তখন মনে হয়েছে, এই পতাকার জন্য লড়ব। কিছু একটা করে দেখাব।’ মারজান নিজেকে দেওয়া কথা রেখেছেন। নিজেকে আলাদাভাবে চিনিয়েছেন সবার কাছে। মারজান সত্যি করে দেখিয়েছেন। বিশ্বাস ছিল নিজের সামর্থ্য। এখানেও তিনি সফল। কাঠমান্ডুতে বাজিয়েছেন ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’র সুর। কারাতে আসার পেছনের গল্পটা জানতে কেমন ছিল তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন মারজান, ‘আমার শুরুটা ছিল স্কুল থেকেই। যখন ভিকারুন্নিসা নূন স্কুলে পড়ি, তখন খালেদ মনসুর নামে একজন লোক একটি স্টাইল শুরু করেন। সেখানে প্র্যাকটিস করতাম। তবে সেটা কারাতে ছিল না।
আমার এসএসসির পর কারাতে শুরু করি। যখন খেলতাম তখনই স্বপ্ন দেখতাম একদিন বড় কোনো আসরে পৌঁছাব। দেশকে ভালো একটি জায়গায় রিপ্রেজেন্ট করব। ইউটিউবে যখন অন্য বন্ধুরা মুভি-নাটক দেখত, আমি তখন খেলাধুলা রিলেটেড ভিডিওগুলো বেশি দেখতাম। তবে শুরুতে পরিবারের বাধাটা আমার কাছে অনেক বড় ছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জায়গায় মেয়েদের সবকিছুতে বড় বাধা থাকে। খেলাধুলার ক্ষেত্রে ক্রিকেট ফুটবলের মতো অন্যান্য খেলাধুলার তেমন ভবিষ্যৎ নেই। তাই বাবা-মায়ের মনে সব সময় আশঙ্কা কাজ করত। পরিবার চাইত না আমি খেলাধুলায় যাই। তবু নিজেকে দমিয়ে রাখিনি কোনো প্রতিবন্ধকতার কাছে।’ জয়ের জন্যই ছুটেছি সারাক্ষণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্বপ্ন লালন করেছি। লক্ষ্য ছিল একটাইÑপরিবারকে দেখিয়ে দিতে চাই আমিও পারি জয় নিয়ে আসতে। এখন আমার জন্য আমার পরিবারকে সারা দেশ চিনতে পারছে।’ এসএ গেমসে স্বর্ণপদক পেয়ে সেই আশা পূরণ হয়েছে মারজানের। একটা স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ঠিকই তবে আরও অনেক দূর মারজান এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশের পতাকাকে।