শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
উদ্যোগ

১০ টাকায় বিশুদ্ধ পানি

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

১০ টাকায় বিশুদ্ধ পানি

আবহাওয়া তুলনামূলক বেশি রুক্ষ হওয়ায় নওগাঁসহ রাজশাহী বিভাগের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে বলা হয় ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চল। পানির সংকট এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান সমস্যা। বিশেষ করে পানের জন্য সুপেয় পানি এ অঞ্চলে রীতিমতো দুষ্কর। বিশেষ প্রকল্পের আওতায় এ সমস্যা সমাধানে সাবমারসিবল পাম্পের মাধ্যমে নওগাঁর তিন উপজেলায় পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। এ প্রকল্পের আওতায় সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর এ তিন উপজেলায় ৩০০টি সাবমারসিবল পাম্পের মাধ্যমে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষের পানি সরবরাহ শুরু করেছে। এর বিপরীতে মাথাপিছু খরচ নেওয়া হচ্ছে প্রতি মাসে মাত্র ১০ টাকা। এলাকার পানি সংকট নিরসন করে তাদের সুস্থ জীবনধারায় ফিরে আনা সম্ভব হয়েছে এ প্রকল্পের মাধ্যমে।

জানা গেছে, নওগাঁর সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুরে উপজেলা ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র উপজেলা। এ বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির অভ্যন্তরীণ স্তর এতটাই নিচু যে; এসব এলাকায় যুগ যুগ ধরে কোনো নলকূপ স্থাপন সম্ভব হয়নি। কাজেই এসব এলাকার মানুষ মাটি কূপ এবং পুকুরের পানি পান করা, গোসল করা, থালা-বাসন পরিষ্কার ও রান্না করাসহ সংসারের সব কাজ সম্পাদন করে থাকতেন। মাটি কূপের পানি এবং পুকুরের পানি সব সময় অপরিষ্কার এবং নোংরা থাকত। কাজেই বাধ্য হয়ে গভীর কূপ  থেকে পানি উত্তোলন এবং দূর থেকে পুকুরের পানি এনে সংসারের যাবতীয় কাজ করতে তাদের খুবই কষ্ট হতো। এতে করে অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকত। এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রথম পর্যায়ে সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় ৩০০টি সাবমারসিবল পাম্প বসানো হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদারের পরামর্শ এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সহযোগিতায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই কার্যক্রমে একটি পাড়ায় একটি সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে উঁচুতে একটি পিলারের ওপর ৩০০০ লিটারের ট্যাংকি স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুতের সাহায্যে সাবমারসিবল চালিয়ে ট্যাংকিতে একটি পাইপের দ্বারা পানি উত্তোলন করা হয়। অন্য পাইপের সঙ্গে সংযোগ করে পাড়ায় পাড়ায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়েছে। একটি ট্যাংকি থেকে সংশ্লিষ্ট পাড়ায় পৃথক ৮টি প্লাটফরম তৈরি করা হয়েছে। এসব প্লাটফরমে ট্যাপ সংযোগ করে পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই প্লাটফরমে এলাকাবাসী যার যার প্রয়োজন মতো পানি সংগ্রহ করতে পারেন। এসব পাম্প থেকে ১৫ হাজার পরিবারের প্রায় ৭৫ হাজার মানুষের সুপেয় বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। নওগাঁ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বরেন্দ্র অধ্যুষিত এলাকার মানুষের পানির যে অবর্ণনীয় কষ্ট তা দূরীভূত হয়েছে। এতে করে মাত্র প্রতি মাসে ১০ টাকা খরচ করে বিশুদ্ধ খাবার পানি পাচ্ছেন। আর এই বিশুদ্ধ পানির জন্য তাদের অসুখ-বিসুখ নেই বললেই চলে। তবে এই প্রকল্পের আওতায় ৫০ ভাগ মানুষ উপকৃত হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর