শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
সাফল্য

মাটি ছাড়া শাক-সবজি চাষ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

মাটি ছাড়া শাক-সবজি চাষ

প্রায় ৮০০ বর্গফুটের একটি জায়গা। জায়গাটি বাঁশ ও জাল দিয়ে ঘেরা। লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে খাঁচা। খাঁচায় বসানো একটি প্লাস্টিক।  প্লাস্টিকের ওপর দেওয়া হয়েছে ককসিট। ককশিটে ছিদ্র করে করে রোপণ করা হয়েছে লেটুস এবং কেপসিকাম। লোহার কাঠামো করা টেবিলে পাশাপাশি চলছে মাটি ছাড়া চাষাবাদ। এক সারিতে পানির লম্বা পাত্রের ওপর ককশিট দিয়ে ভাসমান অবস্থায় গাছের চারা রাখা হয়েছে। স্বচ্ছ পানির মধ্যে দেখা যাচ্ছে গাছগুলোর মূল। একটি পানির পাম্প দিয়ে দিনে দুবার করে মাটির বিভিন্ন উপাদানমিশ্রিত পানিও দেওয়া হচ্ছে। মাত্র ২৪ দিনেই লেটুস পাতা তৈরি হয় খাবার উপযোগী হয়ে।

এভাবে মাটি ছাড়াই সবজি রোপণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সবজি বিভাগ। পদ্ধতিটির নাম ‘পারফরম্যান্স অব লেটুস অ্যা- কেপসিকাম ইন রিসার্কোলেটিং হাইড্রোপনিক’। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামও প্রথমবারের মতো এ পদ্ধতি অনুসরণ সফল হয়েছে।                   

ইতিমধ্যে এ পদ্ধতিতে মাটিবিহীন বড় স্টিল বা প্লাস্টিকের ট্রেতে পানির মধ্যে গাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যোপাদানসমূহ সরবরাহ করে টমেটো, ক্যাপসিকাম, লেটুস ও স্ট্রবেরি উৎপাদন করা হয়েছে। লেটুস উৎপাদনে ২৪ দিন এবং টমেটো, ক্যাপসিকাম ও স্ট্রবেরি উৎপাদনে তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত সময় লাগছে। এ ছাড়াও উৎপাদন করা যাবে ফুলকপি, ব্রো কলি, করলা, খাটো শিম, শসা, ক্ষীরা, গাঁদা, গোলাপ ইত্যাদি।

জানা যায়, ককশিটে কাঠামো তৈরি করা ছাড়াও নারিকেলের আঁশের গুঁড়া দিয়ে কাঠামো তৈরি করে মাটি ছাড়া উৎপাদন করা হচ্ছে সবজি। প্লাস্টিকের একটি পটের নিচের অংশে থাকবে ৪ থেকে ৫টি বড় বড় ছিদ্র। তারপর পটের মধ্যে দেওয়া হয়েছে নারিকেলের আঁশের গুঁড়া। প্লাস্টিক পটের মাঝে বপন করা হয় একটি করে বীজ। বীজ বপনের পর পটের উপরিভাগে দিতে হবে একটি খবরের কাগজ। অঙ্কুরিত হওয়ার পর ওপর থেকে কাগজ সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রতিদিন দেওয়া হয় অল্প অল্প করে পানি। এভাবে প্লাস্টিকের পটে নারিকেলের আঁশের গুঁড়ায় মাটি ছাড়া উৎপাদন করা যাবে শাক-সবজির চারা। কিন্তু মূলে মাটির কোনো চিহ্ন নেই। মাটি ছাড়া কেবল পানিতে জন্মাচ্ছে এসব সবজি।      

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম হারুনুর রশীদ বলেন, ‘হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হচ্ছে। দেশে প্রথম গাজীপুরে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু হয়। চট্টগ্রামে প্রথম গবেষণা ইনস্টিটিউটে এ পদ্ধতি অনুসরণ করে সফল হয়েছে। ব্যয়বহুল হলেও সফল পদ্ধতি। তবে কাঠামোতে সুর্যের আলোর ব্যবস্থা এবং পলিথিন দিয়ে ঘেরা থাকতে হয়। ফলে পোকামাকড়ের সংক্রমণ থেকেও রক্ষা করা যায়।’ তিনি বলেন, ‘নগরায়ণের কারণে ক্রমেই জমি কমছে। তাই শহরে বাড়ির ছাদসহ খোলা জায়গায় এ পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। বিশেষ করে শহরের আধুনিক জীবনযাপনকারীদের জন্য এটি অনুকূল। তবে মাটির উপাদান  ক্রয় করা, পাম্প কেনা, লোহার কাঠামো তৈরি এবং অন্যান্য খাতে কিছু ব্যয় হলেও শহরের বাসিন্দাদের জন্য এটি উপযোগী। ইতিমধ্যে অনেক বাগান মালিক আমাদের কাছে এসে এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। কেউ কেউ শুরু করেছেন।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর