শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
কৃষি

নওগাঁয় সরিষা ফুলের মধু বিক্রি কোটি টাকার

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁয় সরিষা ফুলের মধু বিক্রি কোটি টাকার
প্রতি কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা। প্রতিটি বাক্সে মৌসুমে ৩১  কেজি মধু সংগ্রহ করা হবে। আর সে হিসাবে মোট মধুর পরিমাণ দাঁড়াবে ২৯৪৫০ কেজি। আর বিক্রি হবে প্রায়  এক কোটি টাকা 

দৃষ্টির সীমানাজুড়ে হলুদে ভরা সরিষার মাঠ। আর এরই মাঝে মধু আহরণের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত মৌমাছি। নওগাঁর মান্দা উপজেলার অধিকাংশ সরিষার মাঠেই দেখা মিলবে মৌমাছি ছেড়ে মধু আহরণের এমনই দৃশ্য। মাঠের কোল ঘেঁষে রাখা হয়েছে কাঠের অর্ধ-শতাধিক বাক্স। মৌমাছিগুলো তাদের আহরিত মধু নিয়ে এসে জমা করে এসব বাক্সে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে; স্থানীয় চাষি নয়; এসব মৌমাছি চাষ করছেন রাজশাহী থেকে আসা বেশ কয়েকজন শিক্ষিত বেকার যুবক। রোজগারের মাধ্যম হিসেবে একেকজন বেছে নিচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন পথ। সরিষা খেতের পাশে মৌবাক্স স্থাপন করে ভ্রাম্যমাণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করে আয় করেছেন বেশ কয়েকজন বেকার শিক্ষিত যুবক। সরিষা ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহে এসব মাঠে স্থাপন করা হয়েছে একাধিক মৌ-খামার। স্থাপনকৃত এসব খামারেই মধু মাড়াই করে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। আবহাওয়া অনকূলে থাকায় চলতি বছর জেলায় সরিষা থেকে প্রায় কোটি টাকার মধু বিক্রি হবে। মান্দা উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক ইব্রাহীম হোসেন এবার ২০ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। একই গ্রামের কৃষক আবদুর রশিদ ১০ বিঘা, ছোটমুল্লুক গ্রামের কহিম উদ্দিন শাহ ৭ বিঘা, ভারশোঁ গ্রামের মোজাফফর হোসেন ৬ বিঘা ও আবদুল লতিফ ৫ বিঘা জমিতে এ আবাদ করেছেন। এসব কৃষক বলেন, আমন ও বোরো ধানের মাঝখানে দীর্ঘ সময় জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। এ সময় বাড়তি ফসল হিসেবে আমরা সরিষার চাষ করি। বাড়তি এ আবাদ থেকে বাড়তি আয় হচ্ছে অনেক। সরিষা বিক্রির টাকা তারা বোরো আবাদে ব্যয় করছেন। এখন দোকান থেকে আর বাকিতে সার ও কীটনাশক কিনতে হচ্ছে না। সরিষার কাঁটা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। অন্যদিকে চলতি মৌসুমে সরিষার মাঠে স্থাপন করা হয়েছে সাড়ে ৮ শতাধিক মৌ-বক্স। এর মধ্যে সর্বাধিক মৌ-খামার রয়েছে কালিকাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি মাঠে। এসব মৌ-খামারে রয়েছে ৪০ থেকে ১৫০টি মৌ-বক্স। খামারিরা মাঠেই মধু মাড়াই করে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছেন।  রাজশাহীর শিক্ষিত বেকার যুবক জাহিদ হাসান ও মোহসিন আলী। বেকারত্ব ঘোচাতে প্রথমে জাহিদ তার পার্শ্ববর্তী ভাইয়ের নিকট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন মৌ-চাষ। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে রাজশাহী কলেজে লেখাপড়ার পাশাপাশি মৌ-চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি। এদিকে আরেক মৌ-চাষি মোহসিন তিনিও বেশ কয়েক বছর থেকে সরিষার ফুল মধু সংগ্রহ করছেন। তিনি দেশের বাহিরেও মধু রপ্তানি করে থাকেন। তাই তারা শিক্ষিত বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য মৌ-চাষে আগ্রহী হওয়ার আহ্বান জানান তারা। এ ছাড়া রুম্মান আরেফিন রিমন জানান, ১৯৯৫ সাল থেকে আমি এ পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। শুরুতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছিল। মৌমাছি সংরক্ষণ ও উৎপাদনে তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কয়েকবার প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখন সফলতার সঙ্গে মধু উৎপাদন ও বাজারজাত করছি। রাজশাহী শহরের কয়েকটি বিপণিবিতানসহ অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘দারাজ’ এর মাধ্যমে মধু বিক্রির কাজ করে আসছি। সফল এ খামারি আরও বলেন, সরিষা, কালোজিরা, লিচু মৌসুমসহ বছরের ৬ মাস দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৌ-খামার স্থাপন করে মধু সংগ্রহের কাজ করি। অফ সিজনে বাড়িতে মৌমাছি সংরক্ষণের কাজ করে থাকি। রানী মাছি তৈরিতে একটু বেগ পেতে হয়। এ সময় পরাগরেণু, ভুট্টা, বেসম মিশ্রিত খাবার দিতে মৌমাছির চাহিদা পূরণ করা হয়ে থাকে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, খেতে মৌমাছির বিচরণ হওয়ায় পরাগায়ণের ফলে সরিষার ফলন বাড়বে বেশ কয়েকগুণ। এতে করে লাভবান হবেন কৃষক। এ ছাড়া নওগাঁ ও তার পাশর্^বর্তী জেলার বেশ কয়েকজন শিক্ষিত বেকার যুবক জড়িত রয়েছেন তারাও বেশ লাভবান হচ্ছেন। আর সর্বোপরি দেশ পাচ্ছে পুষ্টিকর সুস্বাদু বিষমুক্ত মধু। চলতি বছর জেলায় ৩৪ হাজার ৩৫৭ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। আর পুরো জেলায় ৯৫০টি মৌ-বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা। প্রতিটি বাক্সে মৌসুমে ৩১ কেজি মধু সংগ্রহ করা হবে। আর সে হিসাবে মোট মধুর পরিমাণ দাঁড়াবে ২৯৪৫০ কেজি। আর বিক্রি হবে প্রায় এক কোটি টাকা।   

   

সর্বশেষ খবর