শিরোনাম
শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর উপহার

১০ বাসে শিক্ষার্থীদের মুখে হাসি

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

১০ বাসে শিক্ষার্থীদের মুখে হাসি

বিআরটিসির দ্বিতল বাস। বাসের ভিতরে শিশুদের হৈ-হুল্লোড়। সবাই শিক্ষার্থী। সবার কাঁধে স্কুলব্যাগ। চোখে মুখে আনন্দের ছোঁয়া। প্রাপ্তির উল্লাস। অনেকটা উৎসব উৎসব আমেজ। প্রকাশ পাচ্ছে যানবাহনে কষ্ট-বেদনা ভুলে থাকার অনুভূতি। এমন অমলিন দৃশ্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বাসের শিক্ষার্থীদের। প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভুলিয়ে দিল শিক্ষার্থীদের যাতায়াত-ভোগান্তি। মাত্র দশ দিন আগেও চট্টগ্রাম নগরের শিক্ষার্থীদের জন্য নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল- যথা সময়ে গাড়ি পাওয়া না যাওয়া, গন্তব্যে যেতে একাধিক গাড়ি পরিবর্তন, গাদাগাদি করে যাতায়াত, আসন না থাকা ইত্যাদি নানা সমস্যা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এ উপহারে এসব সমস্যা আর থাকছে না। বড় আকারের দ্বিতল বাসে করেই যেতে পারছে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। নিরাপত্তা তো আছেই। গত ২৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বাসগুলো যাত্রা করে। দ্বিতল বাসগুলো দুই সড়কে মর্নিং ও ইভিনিং শিফটে চলাচল করছে। সরকারি-বেসরকারি স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে বাসে যাতায়াত করছে। বাসগুলোর প্রতিটিতে ৭৩টি করে সিট। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাতজন মহিলাসহ প্রশিক্ষিত ২০ জন সহকারী। চালক হিসেবে আছে বিআরটিসির স্থায়ী চালকরা। আর বাসগুলো তদারকিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা ও আইসিটি) নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য বাস দেওয়ার সিদ্ধান্তটি প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। শুরু থেকেই বাসগুলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস, আনন্দ ও উৎসাহের কমতি নেই। বাসগুলোর মাধ্যমে তারা কম অর্থ ও সময়, নিরাপদ এবং ভোগান্তি ছাড়া স্কুলে যাতায়াতের সুযোগ পেয়েছে। অভিভাবকরাও এখন অনেকটা নিশ্চিন্তে সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে পারছেন। নগরের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে গেলেই চোখে পড়বে সড়কের একপাশে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে শিক্ষার্থীরা। বাস আসার সঙ্গে সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে উঠতে পারে বাসে।   ৩০ মিনিটে পূরণ হয়ে যায় বাসের আসন। মুরাদপুর মোড় মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরাফ মাহমুদ বলেন, ‘বাসা থেকে আম্মু এখানে এনে গাড়িতে তুলে দিয়েছেন। এখন আর সমস্যায় পড়তে হয় না।’ নগরের বহদ্দার হাট এলাকার বাসিন্দা শিক্ষার্থী এহতেশাম মুনতাসির বলেন, ‘স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হয়ে গাড়ির জন্য অনেকক্ষণ সময় অপেক্ষা করতে হতো। এখন আর গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।’ মুহাম্মদ সেলিম নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে কেবল শিক্ষার্থী নয়, অভিভাবকদেরও উপকার হচ্ছে। এখন আমাদের সময় এবং অর্থ দুটিই সাশ্রয় হচ্ছে। সঙ্গে কমেছে দুর্ভোগ।’   ভাড়া আদায় করবে ‘সততা বক্স’  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের বিআরটিসির ১০টি দ্বিতল বাসগুলোতে যে কোনো গন্তব্যে যেতে শিক্ষার্থীদের গুনতে হবে মাত্র পাঁচ টাকা। তবে ভাড়া আদায়ে নেই কোনো হেলপার (সহকারী)। ভাড়া আদায় করবে ‘সততা বক্স’। ভাড়া আদায়ে সহকারীর বদলে বাসের সামনে ও পেছনে থাকবে তালাবদ্ধ দুটি বক্স। ‘সততা বক্স’ নামের বক্সগুলোতে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে ভাড়ার টাকা ফেলবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু হাসান সিদ্দিক বলেন, ‘প্রতিটি শিক্ষার্থীর গন্তব্যে যেতে লাগবে মাত্র পাঁচ টাকা। এ টাকা আদায়ে কোনো সহকারী থাকবে না, সততা বক্সেই শিক্ষার্থীরা নিজে টাকা রাখবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততা, দায়িত্ববোধ, ন্যায়-নিষ্ঠা এবং সত্যবাদিতা প্রতিষ্ঠা হবে।’  যেসব রুটে চলছে ১০টি বাস চট্টগ্রাম নগরের স্কুল ও সড়ক বিবেচনায় নিয়ে ১০টি বাস সার্ভিস চলাচলের জন্য দুটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম রুটে বহদ্দারহাট-মুরাদপুর থেকে চকবাজার-গণি বেকারি-জামালখান-চেরাগী পাহাড়-আন্দরকিল্লা-লালদীঘি কোতোয়ালী হয়ে নিউ মার্কেট। দ্বিতীয় রুটে অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর-২ নং গেইট-জিইসি-টাইগারপাস হয়ে আগ্রাবাদ পর্যন্ত যাতায়াত করবে। ফিরতি পথেও একই রুটে যাতায়াত করবে।  প্রতিটি বাসে রয়েছে ছয়টি সিসি ক্যামরা। যার মাধ্যমে সর্বদা পর্যবেক্ষন করবে কতৃপক্ষ।

সর্বশেষ খবর