শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

মানুষের সেবায় এক প্রকৌশলী

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

মানুষের সেবায় এক প্রকৌশলী

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি দিনমজুর স্বামীর স্ত্রী। তবে তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করার সক্ষমতা নেই স্বামীর। কঠিন এ সময় স্বামীর পাশে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াল নেসার ফাউন্ডেশনের ‘নিরাপদ মাতৃত্ব’ সেবা। একইভাবে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সন্তানসম্ভবা মহিলাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। অসচ্ছল স্বামীর পক্ষে স্ত্রীর সিজার করানোর আর্থিক সক্ষমতা নেই। অনলাইনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানোর পর সহায়তা করা হয় ওই প্রসূতির চিকিৎসায়। 

এভাবে অজ্ঞাত রোগীর সেবক খ্যাত প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসারের উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে ‘নিরাপদ মাতৃত্ব’ সেবা। যার সুফল পাচ্ছে অসহায় গরিব, দুস্থ, অসচ্ছল ও খেটে খাওয়া মায়েরা। প্রসূতি মায়েদের পাশাপাশি দুস্থ নারীদের চিকিৎসায়ও কাজ করে চলেছে ‘নিরাপদ মাতৃত্ব’ সেবা। গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। সেবা নিতে প্রসূতির নাম, স্বামীর পেশা, অসচ্ছলতার কারণ, নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিতে হয়। গোপন রাখা হয় সেবা গ্রহণকারীর পরিচয়।  

প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসার বলেন, ‘অসহায়, আর্থিকভাবে অসচ্ছল, দিনমজুর বা চক্ষুলজ্জায় নিজের অক্ষমতার কথা কাউকে বলতে পারেন না, এমন অসহায় পরিবারের গর্ভবতী মায়েদের নরমাল-সিজার ডেলিভারির আর্থিক সহযোগিতা দিতে নিরাপদ মাতৃত্ব শীষর্ক স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি শুরু করা হয়। এটি কেবল চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশের প্রসূতি মায়েরা এ সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপদ মাতৃত্ব কর্মসূচির সেবা নিতে হাসপাতালে ভর্তির কাগজপত্র নিরাপদ মাতৃত্ব পেজে মেসেজ করে দিতে হয়। এরপর কাগজপত্রগুলো দ্রুত যাচাই করে সেবা পাওয়ার উপযুক্ত হলে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়। সমাজের মানবিক মানুষের সহায়তায় এ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এসব মহৎ মানুষ তাদের নাম প্রকাশ করেন না। সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’

জানা যায়, অজ্ঞাত রোগীর সেবক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসার ২০০৭ সালে চমেক হাসপাতালে অক্সিজেন সেবা না পেয়ে বাবাকে হারান। এরপর থেকেই অজ্ঞাত রোগীর সেবা করে আসছেন তিনি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় আট শতাধিক অজ্ঞাত রোগীর সেবা করেন। করোনাকালেও থেমে থাকেনি তার সেবা। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসমূহে তিনি অবিরত অক্সিজেন, অক্সিমিটার, সুরক্ষা সামগ্রী, ডিজিটাল প্রেসার মেশিন, মাস্কসহ নানা সামগ্রী দিয়ে আসছেন। চমেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের রোগীর জন্য দিয়েছেন খাবার। নিজে চাকরি করা প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার টাকা বেতনে জেনারেল হাসপাতালে নিয়োগ দিয়েছেন দুজন নমুনা সংগ্রহকারী ও করোনা স্যাম্পল সংগ্রহ সেন্টারে ব্যবস্থা করেন দুটি সাউন্ড সিস্টেমের। পাশাপাশি হাসপাতালে দেন ২০০ পিপিই। তার উদ্যোগে চমেকের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবে দেওয়া হয়েছে দুই টনের এসি। হাসপাতালে দান করেন অক্সিজেন সিলিন্ডার, মাস্ক, গ্লাভস, ডিজিটাল প্রেসার মেশিন ও জীবাণুনাশক স্প্রে।

সর্বশেষ খবর