শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র লক্ষ্মীনারায়ণ রাজপ্রাসাদ

মো. রাসেল, লক্ষ্মীপুর থেকে ফিরে

সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র লক্ষ্মীনারায়ণ রাজপ্রাসাদ

জরাজীর্ণ রাজফটক, আগাছা জন্মানো অন্দরমহল, শানবাঁধানো ঘাট, শিল্পীবিহীন নৃত্যশালা আর বিরাটাকার লোহার বিম আশ্রয় করে দাঁড়িয়ে আছে লক্ষ্মীনারায়ণ রাজপ্রাসাদ। কালের সাক্ষী লক্ষ্মীপুর জেলার এই দালালবাজার জমিদারবাড়ি ঘিরেই গড়ে উঠছে প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক (চট্টগ্রাম ও সিলেট) ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে লক্ষ্মীনারায়ণ জমিদারবাড়িকে প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হবে। এটি প্রত্ন ও পর্যটক উন্নয়নের একটি অংশ। চলতি বছরের প্রথম কাজ হচ্ছে আট একর জায়গার চারপাশে প্রাচীর নির্মাণ করা। একটি সুদর্শন ফটক করারও পরিকল্পনা আছে। প্রাচীর নির্মাণ হয়ে গেলে দুষ্ট লোকদের আনাগোনা কমে যাবে। তখন পর্যটকদের জন্য এটি উন্মুক্ত করা হবে।

তিনি বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হান্নান মিয়া দালালবাজার জমিদারবাড়ি পরিদর্শনে যান। সেখানে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এ জেলার ইতিহাস অনেক পুরনো, যার প্রমাণ বহন করছে জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা। এর মধ্যে অন্যতম ৩০০ বছর পুরনো দালালবাজার জমিদারবাড়ি। লক্ষ্মীপুর জেলা শহর থেকে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে দালালবাজার-সংলগ্ন প্রাচীন এই জমিদারবাড়ির অবস্থান। এই ঐতিহাসিক স্থাপনা ঘিরে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। আট একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাজফটক, জমিদার প্রাসাদ, অন্দরমহল, অন্দরপুকুর, শানবাঁধানো ঘাট- এ সবই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাড়িটি দেখেই পরিচয় মেলে জমিদারদের নান্দনিক রুচির।

জানা গেছে, লক্ষ্মীনারায়ণ নামে এক ব্যক্তি কাপড়ের ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে দালালবাজারে আসেন। নিজ দক্ষতাগুণে ব্যবসার প্রসার ঘটান তার ছেলে ব্রজবল্লভ। পরে ব্রজবল্লভের ছেলে গৌরকিশোর কলকাতায় লেখাপড়ার সুবাদে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহচর্যে আসেন এবং জমিদারি খরিদ করেন। ১৭৬৫ সালে রাজা উপাধি লাভ করেন গৌরকিশোর। তখন তিনি দালালবাজারে নির্মাণ করেন এই জমিদারবাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, শত বছর ধরে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকা ঐতিহাসিক নিদর্শনটির সংস্কার কাজ শেষ হলে এটি হবে লক্ষ্মীপুরের সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন কেন্দ্র। অনেক দিন ধরেই লক্ষ্মীপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা প্রায়ই এখানে ঘুরতে আসেন।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে জমিদারবাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। কিন্তু স্থানীয় একটি মহল উচ্চ আদালতে রিট করায় উদ্যোগটি সফল করা যায়নি। তবে গত বছর ২৯ আগস্ট আদালত ‘জমিদারবাড়ি ও খোয়া সাগরদীঘি’ সংক্রান্ত রিটটি খারিজ করে দেয়। এর পরই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রাচীন এ নিদর্শনের সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়।

লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ দালালবাজার জমিদারবাড়ি। আইনি জটিলতা নিরসন হওয়ার পর প্রাচীন এ নিদর্শনটির সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে অনেক কাজ করা হয়েছে এবং কিছু কাজ চলমান। এর রক্ষণাবেক্ষণ জেলা প্রশাসন করছে। সরকারি বরাদ্দ পেলে প্রাচীর নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ শুরু হবে। লক্ষ্মীপুর জেলা শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা বাসে যাওয়া যায় দালালবাজার। বাসে জনপ্রতি ১০ টাকা এবং সিএনজিতে ১৫ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়। বাজার থেকে হেঁটে ৫০০ গজ দক্ষিণেই লক্ষ্মীনারায়ণ রাজপ্রাসাদের অবস্থান।

 

 

সর্বশেষ খবর