শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

নৈসর্গিক ডাকাতিয়া নদী

ফারুক আল শারাহ, লাকসাম

নৈসর্গিক ডাকাতিয়া নদী

কুমিল্লা জেলার বৃহত্তর লাকসামের ঐতিহ্যের ডাকাতিয়া নদী। বর্ষায় যেন নদীটি যৌবন ফিরে পেয়েছে। গ্রামীণ জনপদে প্রকৃতি যেন বিলিয়ে দিয়েছে অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যে। যা বরাবরই ভ্রমণপিপাসুদের দেয় আনন্দ। নদীতে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের মাছ আর বোরো মৌসুমে থাকা পানি স্থানীয় কৃষকের চাহিদা পূরণ করে।

ডাকাতিয়া নদীটি বাংলাদেশ-ভারতের আন্তসীমান্ত নদী। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০৭ কিমি এবং প্রস্থ প্রায় ৬৭ মিটার (২২০ ফুট)। এটি মেঘনার একটি উপনদী। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা জেলার বাগসারা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং পরবর্তীতে চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত। নদীটি কুমিল্লার লাকসাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ, চাঁদপুরের শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জ উপজেলা অতিক্রম করে চাঁদপুর মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। নদীটির ধরন প্রকৃতি সর্পিলাকার। ডাকাতিয়া নদীর নামকরণেও রহস্যেঘেরা। এ নদী দিয়ে এক সময় মগ-ফিরিঙ্গি জলদস্যুরা নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলায় প্রবেশ করত এবং নদীতে ডাকাতি করত। ডাকাতদের উৎপাতের কারণে নদীটির নাম হয় ডাকাতিয়া। কথিত আছে, ডাকাতিয়া নদীর গ্রাসে দুই পাড়ের মানুষ সর্বস্ব হারাত। জীবন বাঁচাতে ডাকাতিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে বহু মানুষের সলিলসমাধি হয়েছে। ডাকাতের মতো সর্বগ্রাসী বলে এর নামকরণ হয়েছে ডাকাতিয়া নদী।

ডাকাতিয়া খনন না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে নদীটি যৌবন হারালেও বর্ষা মৌসুমে নদীটির সৌন্দর্য ফিরে এসেছে। ডাকাতিয়ার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট অংশের বেশির ভাগ স্থান এখন ভ্রমণপিপাসুদের আনন্দ দেয়। নীল আকাশের নিচে নদীটি সেজেছে বর্ণিল সাজে। ডাকাতিয়া এখন পানিতে টইটম্বুর। এ সময় নদীর সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসেন শহুরে মানুষও। তারা মনের আনন্দে ছুটে যান ডাকাতিয়ার পানে। দলবেঁধে অনেকে নৌকাযোগে দূর-দূরান্ত ছুটে যান। অনেকে নদীর বুকেই করেন বনভোজন আয়োজন। রাতের বেলায় শীতল বাতাস ডাকাতিয়ার গর্জন পথচারীদের উদ্বেলিত করে।

সম্পদ, সম্ভাবনা আর অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের হাতছানি ডাকাতিয়া বর্ষা মৌসুমে রূপ ছড়িয়ে দিলেও পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এর সৌন্দর্য হারাতে থাকে। দখলদাররা ডাকাতিয়ার পাড় দখল ও মাটি কেটে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে কলকারখানার দূষিত বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলে বিষাক্ত করে তোলা হয়। নদী তীরের আশপাশের বাসাবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে নদীর পানি দূষিত হয়ে মশা-মাছির উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়ে নানা রোগব্যাধি ছড়ায়। দীর্ঘ কয়েক বছর খনন না করায় কোথাও কোথাও মরা খালে পরিণত হয়।

তখন এর সুফল থেকে বঞ্চিত হন স্থানীয় কৃষক, ব্যবসায়ীসহ ভ্রমণপিপাসুরা। অপার সম্ভাবনার ডাকাতিয়া নদীকে দখলমুক্ত করতে বছরজুড়ে স্থানীয়রা দাবি জানিয়ে এলেও এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। ২০১৯ সালের মার্চে পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ডাকাতিয়া নদীর দুই তীর পরিদর্শনে এসে খনন ও উচ্ছেদ অভিযান শুরুর ঘোষণা দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপির আন্তরিক তৎপরতায় ডাকাতিয়ার নাব্য ও জৌলুস ফিরে আসার বিষয়ে আশার আলো দেখছেন নদী এলাকার কৃষক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। মন্ত্রী নদীটির নাব্য ফিরে আনার পাশাপাশি নদীর দুই তীরকে দৃষ্টিনন্দিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা অব্যাহত রেখেছেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর