পিঁয়াজের গুঁঁড়া পদ্ধতি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এটি বাণিজ্যিকভাবে না করে শুধু ঘরোয়াভাবে করলেও লাভ। তাতেও দেশে পিঁয়াজের আমদানি কমবে

বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে পিঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩৫ লাখ মে. টন। দেশীয়ভাবে পিঁয়াজের উৎপাদন হয় ২৩ দশমিক ৭৬ লাখ মে. টন। ১১ থেকে ১২ লাখ মে. টন পিঁয়াজ প্রতি বছর ঘাটতি থাকে। যা আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। মসলা বিজ্ঞানীরা বলছেন, পিঁয়াজের গুঁড়া করার পদ্ধতি খুব সাধারণ। খোসা ছাড়িয়ে পিঁয়াজ প্রথমে স্লাইস করে ভাপ দিতে হবে। পরে তা শুকিয়ে সোডিয়াম মেটাবাইসারফেট দ্রবণে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর তা শুকাতে হবে। এরপর সাধারণ ব্লেন্ডিং মেশিনেই এটি গুঁড়া করা যাবে।

বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাসুদ আলম জানান, পিঁয়াজ গুঁড়া করলে এর গুণগত মান, খাদ্যে ব্যবহারের পরিমাণ কোনোটাই কমে না। এক কেজি পিঁয়াজ শুকিয়ে গুঁড়া পাওয়া যায় ১০০-২০০ গ্রাম। রান্না করার ক্ষেত্রেও অনুপাত এভাবে বণ্টন হয়। তার মতে, একটি পরিবারে এক কেজি মাংস রান্না করতে কাঁচা পিঁয়াজ লাগে ২৫০ গ্রাম। আর এই ২৫০ গ্রাম পিঁয়াজ গুঁড়া করলে পাওয়া যাবে ২৫ গ্রাম। মাংস রান্নাতে গুঁড়া পিঁয়াজের ২৫ গ্রামই দিলেই হবে। তাদের উদ্ভাবিত পিঁয়াজের গুঁড়া পদ্ধতি প্রয়োগ করলে সংরক্ষণের সময়জনিত আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

পিয়াজের গুঁড়া এক বছর প্যাকেটজাত করে সংরক্ষণ করা যায়। এতে বারি জাতের উচ্চ ফলনশীল গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজ উৎপাদনের পর তা গুঁড়া করে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করলে সংরক্ষণ ঘাটতি যেমন থাকবে না। তেমনি কৃষকরা ন্যায্যমূল্যেও পাবেন। আর উচ্চ ফলনশীল বারি জাতের পিঁয়াজে কৃষকদের আগ্রহও বেড়ে যাবে।

বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামীম রেজা বলেন, পিঁয়াজের গুঁড়া পদ্ধতি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এটি বাণিজ্যিকভাবে না করে শুধু ঘরোয়াভাবে করলেও লাভ। তাতেও দেশে পিঁয়াজের আমদানি কমবে।

বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রে ড. মাসুদ আলমের তত্ত্বাবধানে গবেষণাগারে গুঁড়া পিঁয়াজের উৎপাদন চলছে। তিনি জানান, জাপান, চীন, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বহু দেশেই পিঁয়াজের গুঁড়া প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশে নেই। এ কারণে তিনি প্রায় তিন বছর পিঁয়াজের গুঁড়া করে সংরক্ষণের বিষয়ে গবেষণা করেন। তিনি জানান, খুব সাধারণভাবে যে কোনো উদ্যোক্তা ঘরে বসেই এই পিঁয়াজের গুঁড়া উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে পারবেন। এটি ছড়িয়ে দিতে পারলে পিঁয়াজ সংকট আর থাকবে না।