শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছে মানিকগঞ্জের যুবক

বিরল প্রজাতির গাছের সংগ্রহ এবং সাজানো নার্সারিটি দেখতে প্রতিদিনই আসছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ

মো. কাবুল উদ্দিন খান

ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছে মানিকগঞ্জের যুবক

মানিকগঞ্জের তানভীর আহমেদ সারা দেশেই তার ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তার সংগ্রহে রয়েছে ৭১৭টি ফুল এবং ফলের গাছ। এর মধ্যে ৫১৩টি দেশি-বিদেশি প্রজাতির ফুলগাছ এবং ১৪০টি বিভিন্ন ধরনের ফলগাছ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে ফুলের বাগানে মনোনিবেশ করেন তানভীর। শিক্ষিত এই যুবকের বাগানে রয়েছে শত শত ফুল ও ফলের গাছ। এসব বিক্রি করে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। সেই সঙ্গে পেয়েছেন দেশজোড়া খ্যাতি। বিরল প্রজাতির গাছের সংগ্রহ এবং সাজানো নার্সারিটি দেখতে প্রতিদিনই আসছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তানভীর জেলার হরিরামপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের আবদুল খালেক ও আছিয়া খাতুন দম্পতির ছেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে তানভীর সবার ছোট। ওই বাগানে গিয়ে সরেজমিন দেখা যায়, চোখ ধাঁধানো ফুল ও ফলগাছের সমারোহ। বাগানটির উদ্যোক্তা তানভীর আহমেদসহ আরও দুজন শ্রমিক গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তানভীর আহমেদ বলেন, আমার মায়ের শখ ছিল বাগান করা। তাঁর কাছ থেকে আমি অনুপ্রাণিত হই। ১৯৯৬ সালে মা এবং ২০০৯ সালে বাবা মারা যান। ২০১৪ সালের দিকে আমি বাড়ির আঙিনায় ছোট পরিসরে বাগান করি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে বাণিজ্যিকভাবে এই বাগানটি শুরু করি। ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার প্রতিবেশী এলিন শিকদারের কাছ থেকে পাঁচ বছরের জন্য ২৪ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে বাগানটি করি। দুই বছরের মাথায়, এই বাগানে এখন আমেরিকা, চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতসহ বিশ্বের ২৫টি দেশের ৭১৩ প্রজাতির ফুল ও ফলগাছের সংগ্রহ রয়েছে।’ ভালোলাগা, ভালোবাসা থেকেই বাগান করেছি। এ ব্যাপারে থাইল্যান্ড এবং আমেরিকার কয়েকজন বন্ধু আমাকে নানাভাবে সহায়তা করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাগানে এখন ১০৭ প্রজাতির শাপলা, ৫৬ প্রজাতির পদ্ম ও ২০ প্রজাতির অন্যান্য জলজ ফুলগাছ রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে ১০০ প্রজাতির জবা, ৬০ প্রজাতির গোলাপ, ৪০ প্রজাতির কাঠ গোলাপ, ১০০ প্রজাতির গোলাপ, ৪০ প্রজাতির সুগন্ধি ফুল ও ৫০ প্রজাতির লতানো ফুলগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ।  

এসবের মধ্যে অ্যাঞ্জেল ট্রাম্পেট, কানাইডিংগা, ক্যানাঙ্গা, বিভিন্ন রঙের দোলনচাঁপা, ডোম্বিয়া, স্থলপদ্ম, জল গোলাপ, নীলমণি, শ্বেতমণি, বেলি, পার্সিয়ান জুঁই, সরস্বতী চাঁপা, পদ্ম, আফ্রিকান বাওবাব, হলুদ শিমুল, রাজ অশোকসহ ৭১৩ প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ আছে। তিনি আরও জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আমার বাগানে এসে ফুল ও ফলের গাছ কিনছেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনসহ গাজীপুরের বিভিন্ন রিসোর্টে এবং রাজধানীর গুলশানে নিয়মিত গাছ সরবরাহ করছি। বর্তমানে আমার বাগানে প্রায় ৩০ লাখ টাকার বিভিন্ন গাছ রয়েছে। তবে বন্যায় কিছু গাছের ক্ষতি হয়েছে। হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল গফফার বলেন, ‘দেশি-বিদেশি বিরল প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে তানভীরের সংগ্রহে। আমি নিয়মিত বাগানের খোঁজখবর রাখছি। কেউ বাগান কিংবা স্বতন্ত্র ও প্রচলিত কৃষি উদ্যোগ গ্রহণে আগ্রহী হলে তাকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করব।’

সর্বশেষ খবর