শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

জীবিকা যুদ্ধে পেট্রল পাম্পে নারীকর্মী

রোহেত রাজীব

জীবিকা যুদ্ধে পেট্রল পাম্পে নারীকর্মী

মোটরসাইকেলের পেট্রল নিতে পাম্পে ঢুকেই থমকে যেতে হলো। মেশিন থেকে যানবাহনে জ্বালানি দিচ্ছেন একজন নারী।  বিদেশি সিনেমায় দেখা গেলেও বাংলাদেশে এই দৃশ্য একেবারেই অচেনা। সামনে গিয়ে চাহিদার কথা জানাতেই পেট্রল দিয়ে দিলেন। মুহূর্তেই ভাংতি টাকা নিয়ে ফিরেও এলেন। কাজের দক্ষতা দেখে মনে হলো অনেক দিন যাবৎ তিনি এখানে কাজ করছেন। আশপাশে তাকাতেই আরও কয়েকজন নারীকর্মী চোখে পড়ল। তারাও সমান তালে পুরুষ কর্মীদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। জানা গেল, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের লাঙ্গলবন্দে প্লানা ফিলিং স্টেশন নামের এই পেট্রল পাম্পে কাজ করছেন ছয় নারীকর্মী। কৌতূহলবশত মোটরসাইকেল পার্ক করে একজন নারীকর্মীর সঙ্গে কথা বলার জন্য এগিয়ে গেলাম। সাংবাদিক শুনে প্রথমে একটু ইতস্তত করলেও পরে অকপটেই বলে গেলেন অনেক কথা। পিঙ্কি নামে একজন নারীকর্মী জানালেন, অনেক দিন ধরে এ কাজে আছেন। এই আয় দিয়ে তার মতো অন্য নারীকর্মীরাও সংসার চালান। পাম্প ম্যানেজার আমির হোসেন বাবু জানালেন, ২০০০ সালে এই পাম্প প্রতিষ্ঠা হয়। তার দুই বছর পরই তারা নারীকর্মীদের নিয়োগ দেন। একজন-দুজন করে বাড়তে বাড়তে এখন ছয় নারীকর্মী তাদের পাম্পে কাজ করছেন। প্রথমদিকে অনেক লোকের বাজে মন্তব্য শুনতে হয়েছে তাদেরও। শুরুতে ট্রাক ড্রাইভার-হেলপাররা পাম্পের নাম দেন ‘ছেরি পাম্প’ অর্থাৎ  মেয়েদের পাম্প। তবে এখন আর কেউ এমন বলেন না। কারণ তারাও জেনে গেছেন কাজের কোনো বিকল্প নেই, কাজের কোনো গোত্র বা লিঙ্গ নেই, কাজ কাজই। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েরা সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে চলছেন সমান তালে। ভয়কে জয় করে এগিয়ে চলছেন নারীরা। এগিয়ে যাবেন আরও সামনের দিকে। পাম্পকর্মী সোনিয়া বললেন, যে কাজ দক্ষতা-সফলতা সব কিছু দিয়েছে, তা ছাড়ার চিন্তা কখনই মনে আসেনি। নানা প্রতিকূলতা আর বেপরোয়া পুরুষদের বাঁকা কথা, বাজে মন্তব্য সব কিছু পাশ কাটিয়ে আজও টিকে আছেন তারা,  কাজ করে যাচ্ছেন পুরুষ কর্মীদের সঙ্গে সমান তালে।

সর্বশেষ খবর