শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
অজপাড়াগাঁয়ে মকছুদ-মমতাজ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগ

কুমিল্লায় জাতীয় মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গভীর রাতে অ্যাম্বুলেন্স সেবা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লায় জাতীয় মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গভীর রাতে অ্যাম্বুলেন্স সেবা

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার অজপাড়াগাঁ মড়হ। সেই গ্রামে গড়ে উঠেছে জাতীয় মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই গ্রামে রাত গভীরে অ্যাম্বুলেন্স সেবাও পাওয়া যায়। করোনাকালসহ বিভিন্ন সময়ে এলাকায় খাদ্য সহায়তাও দেওয়া হয়। প্রতি মাসে আয়োজন করা হয় বিনামূল্যে চিকিৎসা শিবির। গ্রামের মকছুদ-মমতাজ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে এসব সেবাধর্মী কাজ করা হয়।

ট্রাস্ট সূত্র জানায়, মড়হ গ্রামের বাসিন্দা মকছুদুর রহমান চৌধুরী ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। নাঙ্গলকোট সদরে লজিং থেকে লেখাপড়া করেন। টানাটানির সংসারে বেড়ে ওঠেন। তিনি কর্মজীবনে তহসিলদারের চাকরি করেন। পাঁচ ছেলে এক মেয়ের সবাইকে লেখাপড়া করান। এক শার্টে তিন বছর পার করতেন। এক ছেলে শারীরিকভাবে অসুস্থ। বাকিরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। বড় ছেলে মিজানুর রহমান চৌধুরী সহকারী পুলিশ সুপার, দ্বিতীয় ছেলে মশিউর রহমান চৌধুরী অসুস্থ, তৃতীয় ছেলে মজিবুর রহমান চৌধুরী সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী, চতুর্থ ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী পুলিশ পরিদর্শক, পঞ্চম ছেলে আনিসুর রহমান চৌধুরী ব্যবসায়ী। সবার ছোট মেয়ে মৌসুমী চৌধুরী এক্সিম ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন। মকছুদুর রহমান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগম মারা গেছেন। তবে তাঁদের স্বপ্নকে মরতে দেননি সন্তানরা। মকছুদুর রহমান চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল গ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে এলাকাকে আলোকিত করবেন। বিভিন্ন সময়ে বাঁশ কাঠ জোগাড় করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করতে উদ্যোগ নেন। কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় তিনি এগোতে পারেননি। তবে তাঁর জমানো অর্থ, ছেলেমেয়ের সঞ্চয় ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় মড়হ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মকছুদ-মমতাজ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ট্রাস্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাত গভীরেও অ্যাম্বুলেন্সসেবা পাওয়া যাবে নামমাত্র ফি দিয়ে। এ ছাড়া করোনাকালসহ বিভিন্ন সময় এলাকায় খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। ওই গ্রামের বাসিন্দা এহতেশাম হায়দার চৌধুরী বলেন, মকছুদ-মমতাজ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে সুন্দর অবকাঠামো ও পরিকল্পনা নিয়ে মকছুদ-মমতাজ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ যাত্রা করেছে। আশা করছি প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে এই এলাকা আলোকিত হবে।

চতুর্থ ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাবার ছিল স্বল্প বেতন। তা দিয়ে আমাদের বড় করে তুলেছেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। আমরা ভাইবোনেরা ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় মড়হ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মকছুদ-মমতাজ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ। আমাদের মড়হ বড় গ্রাম। ভালো মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। এই গ্রামের আড়াই কিলোমিটার দূরে লক্ষণপুর, মনোহরগঞ্জ সাড়ে তিন কিলোমিটার, কেয়ারী তিন কিলোমিটার। ওইসব গ্রামে গিয়ে এই গ্রামের শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে। আমরা গতানুগতিক ধারার বাইরে আন্তর্জাতিক মানের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাই। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা যেন তার ক্লাসরুম, তার ওয়াশরুম পরিষ্কার রাখে। এখান থেকে যেন সে জীবন গড়ার শিক্ষা নিয়ে বের হয়। প্রতিষ্ঠানের ফিও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান থেকে কম নেওয়া হবে। আমাদের ইচ্ছা, লেখাপড়ার মানেই শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাবে। তখন গ্রাম আর শহরের শিক্ষার  মানের পার্থক্য থাকবে না।

 

সর্বশেষ খবর