শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পাখিপ্রেমীদের গ্রাম ভাটিনা

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

পাখিপ্রেমীদের গ্রাম ভাটিনা

পশুপাখিদের আস্তানা ভাটিনা। রাতচোরাসহ অনেক পাখি সন্ধ্যায় বের হয়ে খাবার সন্ধান শেষে সকালের আগেই ফিরছে বাঁশঝাড় কিংবা উঁচু গাছের নীড়ে। আবার সকালে বের হয়ে সন্ধ্যার আগে নীড়ে ফিরছে বক, পানকৌড়ি, শালিকসহ নানান জাতের পাখি। তাই পাখির কিচিরমিচির ও কোলাহলে অনেকের সকালের ঘুম ভাঙে। সকাল-সন্ধ্যা গাছে গাছে পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত। এরকম একটি গ্রাম দিনাজপুরের  ভাটিনা। যে গ্রামের মানুষ প্রকৃতিপ্রেমিক, পাখিপ্রেমিক। এ কারণে পশুপাখির অভয়ারণ্য ভাটিনা গ্রাম। গ্রামের গাছে গাছে দেখা যায় কোনো পাখি উড়ছে, কোনোটি ডাকছে এবং পুকুরগুলোয় দেখা যায় কোনো পাখি মাছ শিকারে ব্যস্ত।

গ্রামের প্রবেশপথে পুকুরপাড়ে বাঁশঝাড়ের মাথায় বক, রাতচোরা, পানকৌড়ি, শালিকের কলকাকলীতে মুখরিত। সকালে আর বিকালে পাখিদের আনাগোনায় মন জুড়িয়ে যাবে সবার। এসব পাখি অন্য কোথাও উড়ে যায় না। ঘুরেফিরে আবার ওই বাঁশঝাড়গুলোয় আসে। তবে শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এ গ্রামে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। তাই শীতের এ সময়ে এখানে বসে পাখিদের মিলন মেলা। শীত শেষে অতিথি পাখিরা আবার চলেও যায়। পরিবেশবান্ধব এ গ্রামে বিকালে পাখিদের কলকাকলীতে প্রকৃতি অপরূপ রূপে সাজে। এ গ্রামের মানুষও পশুপাখি-প্রেমিক। এখানে কেউ পাখি শিকার করে না এবং কাউকে করতেও দেয় না। গাছগাছালিও বেশি। পরিবেশ এবং নিজেদের স্বার্থেই পাখিদের রক্ষা করা প্রয়োজন বলে মনে করে এলাকার মানুষ। এভাবেই অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ায় দিনাজপুর সদরের উত্তর শেখপুরা ইউনিয়নের এ গ্রাম কয়েক হাজার পাখির স্থায়ী আবাসে পরিণত হয়েছে।

বর্ষা মৌসুমে এখানে প্রায় ২৫-৩০ হাজার বর্ষালী পাখিও আস্তানা গাড়ে। তখন মুখরিত হতে থাকে পাখির কলকাকলীতে। বৈশাখ মাসে পাখিরা ডিম দেয় এবং তখন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি চলে আসে এ অভয়াশ্রমে। এ সময় কিছু অতিথি পাখিও আসে। অনবরত শোনা যায় ডাহুকের ডাক। এরকম এক গ্রামবাংলায় কেউ এসে বেরিয়ে গেলে কখনো ভুলতে পারবে না সে দৃশ্য।

তবে প্রাকৃতিকভাবে এটা গড়ে ওঠেনি। এ অবস্থা কীভাবে সম্ভব হলো তা খুঁজে দেখতে গেলে সবার আগে বেরিয়ে আসবে আবুল হাসেমের নামটি। তিনি ভালো জানেন কোন পাখিকে কখন ভালো দেখা যায়, কোন বাঁশঝাড়ে আছে ইত্যাদি। এ কারণে আবুল হাসেম ২০১৩ সালে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতির ওপর বিশ্ব পরিবেশ দিবসে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।  এরপর ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পক্ষ থেকেও ২০১৬ সালে পাখির ওপর তিনি পুরস্কার পান।

সর্বশেষ খবর