শনিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
শাহজাহান ভূঁইয়ার সবজি খামার

জার্মানির মাটিতে বাংলাদেশি শাক-সবজি

আগে বেশির ভাগই টবে লাগাতাম। কিন্তু খেয়াল করলাম, কম মাটিতে গাছ ভালোভাবে বাড়ে না। এ কারণে এখন বড় টবের পাশাপাশি কাঠ দিয়ে বড় বেডের মতো করে সেখানে গাছ লাগাচ্ছি...

শনিবারের সকাল ডেস্ক

জার্মানির মাটিতে বাংলাদেশি শাক-সবজি

বাংলাদেশের শাক-সবজির সঙ্গে জার্মানদের পরিচয় করিয়ে দিতে বড় ধরনের একটি খামার গড়েছেন এক প্রবাসী বাংলাদেশি। জার্মানির অফেনবাখ শহরে মাইন নদীর তীরে অবস্থিত এ খামারে কচু, লাউ, কুমড়া, মরিচ, চিচিঙ্গা, ঝিঙাসহ অনেক রকম শাক-সবজি পাওয়া যায়। তবে, খামারটিতে চাষাবাদ পদ্ধতি একটু ভিন্ন। যা পরিবেশবান্ধব উপায়ে করতে হয়। অফেনবাখ শহরের এক কোনায় গড়ে উঠেছে সবুজ এ খামার। খামারটি কয়েক হাজার বর্গমিটার এলাকায় বিস্তৃত। সম্প্রতি জার্মানির ডয়েচে ভেলে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

বাংলাদেশের শরীয়তপুরের বাসিন্দা শাহজাহান ভূঁইয়া জার্মানিতে পাড়ি জমান ১৯৯১ সালে। তিনি একজন শখের খামারি। নিজের দেশে যেসব শাক-সবজি পাওয়া যায়, তার প্রায় সবই এখানে ফলান তিনি। ভূঁইয়া বলেন, ‘২০১৩ সালে আমি এ খামার শুরু করি। আমাদের কাছে সব ধরনের বাংলাদেশি শাক-সবজি পাওয়া যায়। আমার খামারে ১৯ জাতের কাঁচামরিচ আছে, বোম্বাই মরিচ আছে, বেগুন আছে, লাউ আছে, আছে ধুন্দল, বরবটি, লালশাক- এক কথায় বাংলাদেশে যেসব শাক-সবজি পাওয়া যায়, তার সবই আমার এখানে আছে।’ মূলত শিল্পাঞ্চলের মধ্যে অফেনবাখের এ খামারটি গড়ে উঠেছে। নাম হাফেনগার্টেন। স্থানীয় বাংলাদেশিরা শহর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখানে জমি ইজারা নিয়েছেন। শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে এখানে খামার গড়ার অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে শহরটিকে আরও পরিচ্ছন্ন এবং সবুজ মনে হবে বলে আশা তাদের। তবে, এখানকার মাটিতে সরাসরি চাষাবাদ করা যায় না। শাহজাহান ভূঁইয়া এ বিষয়ে বলেন, ‘অফেনবাখ শহর কর্তৃপক্ষ আমাদের যখন জমি করার জন্য জায়গা দেয়, তখন তারা বলে, সরাসরি এখানকার মাটিতে চাষাবাদ করা যাবে না। কেননা, এটা শিল্পাঞ্চল ছিল, ফলে মাটি বিষাক্ত হতে পারে। তাই তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা অন্য স্থান থেকে মাটি এনে টবে করে এখানে চাষাবাদ করি। আগে বেশির ভাগই টবে লাগাতাম। কিন্তু খেয়াল করলাম, কম মাটিতে গাছ ভালোভাবে বাড়ে না। এ কারণে এখন বড় টবের পাশাপাশি কাঠ দিয়ে বড় বেডের মতো করে সেখানে গাছ লাগাচ্ছি। কারণ, মাটি বেশি হলে ফলনও ভালো হয়।’ শীতপ্রধান দেশ জার্মানিতে সারা বছর চাষাবাদ করা ভূঁইয়ার পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই এ খামারে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস অবধি চাষাবাদ করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বেশ দ্রুতই বিভিন্ন শাক-সবজি ফলানো সম্ভব হয়। এ জন্য বিভিন্ন রকম মাচাও তৈরি করেছেন তিনি, যেখানে উদ্ভিদগুলো সহজে বাড়তে পারে। আর শাক-সবজির বীজ অনেক ক্ষেত্রে তিনি এ খামার থেকেই সংগ্রহ করেন। অফেনবাখের এ খামারে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব উপায়ে চাষাবাদ করেন ভূঁইয়া। কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেন না তিনি। কেননা, এখানে উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকারক কোনো কীটপতঙ্গ নেই। আর জমিতে যে সার ব্যবহার করা হয়, তা-ও তৈরি করা হয় জৈব উপায়ে। ভূঁইয়া বলেন, ‘এ গামলায় আমি নিজেই সার তৈরি করি। এখানে বিভিন্ন গাছের পাতা, লাউয়ের ছোলা, শাক-সবজির যত রকম উচ্ছিষ্ট আছে, সব পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখি। এভাবে পনেরো দিন ঢেকে রাখলেই তা সারে পরিণত হয়। এটা জৈব সার এবং উদ্ভিদ ও পরিবেশের জন্য উপকারী।’

খামারটিতে যে কেউ প্রবেশ করতে পারেন। এ জন্য আলাদাভাবে অনুমতি নিতে হয় না। তবে, কোনো সবজি কেউ নিতে চাইলে তার অনুমতি প্রয়োজন হয়।  এই প্রবাসী চান জার্মানরা বাংলাদেশের শাক-সবজির সঙ্গে পরিচিত হোক, বাংলাদেশ সম্পর্কে জানুক।

সর্বশেষ খবর