শনিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

নান্দনিক ভাস্কর্য চেতনায় স্বাধীনতা

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

নান্দনিক ভাস্কর্য চেতনায় স্বাধীনতা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার নান্দনিক ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে গাজীপুরে। গাজীপুর জেলা পুলিশ লাইনসের সামনে চান্দনা চৌরাস্তা-জয়দেবপুর সড়কের পাশে ‘চেতনায় স্বাধীনতা’ নামে এ স্মৃতির মিনারটি নির্মাণ করেছে গাজীপুর জেলা পুলিশ। সৌধটির স্থপতি মাহদী মাহমুদুল হক পুলক।

বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ ঢাকার পুলিশ সদর দফতর থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সে মিনারটি উদ্বোধন  করেন।

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য, ২০ ফুট প্রস্থ ও ২৫ ফুট উচ্চতার সুবিশাল নৌকা এবং মাস্তুলের সমন্বয়ে মুক্তিসংগ্রামের স্মারক ভাস্কর্যটির নির্মাণ করা হয়। কংক্রিটের একটি শক্তিশালী কাঠামোয় নির্মাণ করা হয়েছে সৌধটি। পোড়ামাটির দেয়ালে আঁকা হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। মূল বেদির দুই দিকে তৈরি করা হয়েছে জলাধার। সন্ধ্যা হলেই আলো ঝলমলে হয়ে উঠবে পুরো সৌধটি। বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত মনোমুগ্ধকর ভাস্কর্যটি এরই মধ্যে পথচারীদের আগ্রহে পরিণত হয়েছে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, ‘চেতনায় স্বাধীনতা’ ভাস্কর্যে বিধৃত হয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গৌরব গাথা, ’৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৬ সালের বাংলা ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠা, ’৫৮ সালের সামরিক শাসন জারি, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন এবং ’৭১-এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের টেরাকোটা।

তিনি আরও জানান, ‘চেতনায় স্বাধীনতা’ স্মারক ভাস্কর্যটি নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে। এর মাঝখানে মূল বেদিতে সবার ওপরে ব্রোঞ্জের তৈরি ভাস্কর্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, নিচে দুই সারিতে জাতীয় চার নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শহীদ বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ, শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের প্রতিকৃতি রয়েছে। অর্থাৎ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৌকার মাঝখানে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া তার সঙ্গে রাখা হয়েছে জাতীয় চার নেতার আবক্ষ। দৃষ্টিনন্দন এ ভাস্কর্যটির দুই পাশে চারটি করে মোট আটটি সচিত্র ফলক রয়েছে। মাস্তুলের বাঁ-দিকে পোড়ামাটির চারটি ক্যানভাস যেন সাক্ষ্য দিচ্ছে ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৫৬ ও ১৯৬২ সালে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সব ঘটনা। মাস্তুলের ডান দিকে বর্ণনা করা হয়েছে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচন ও ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়া, জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতার আত্মত্যাগের ঐতিহাসিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই সৌধটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান যে ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলন চলছে সেটির বিরুদ্ধে এটি একটি তীব্র প্রতিবাদ। এটি নির্মাণের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িয়ে দেওয়া এবং সেটি লালন করা, ধারণ করা ও পালন করা এবং তার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসের মান সমুন্নত রাখা ও দেশপ্রেমকে জাগরুক  রাখা এবং দেশকে উন্নত বিশ্বের দরবারে নিয়ে যাওয়া।

সর্বশেষ খবর