শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
বলিয়াদী জমিদারবাড়ি

৪০০ বছরের ইতিহাস

অপূর্ব নির্মাণশৈলীর এই জমিদার বাড়ির মূল পাঁচিলঘেরা অংশে মাঝখানে ত্রিতল জমিদার বাড়ির মূল কাঠামো। মূল বাড়ির ছাদে রয়েছে সফেদ গম্বুজ, যার চারদিকে প্রতিটি ভিতের মাথায় রয়েছে ছোট ছোট মিনার আকৃতির নকশা...

কালিয়াকৈর প্রতিনিধি

৪০০ বছরের ইতিহাস

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বলিয়াদী জমিদারবাড়ি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৪০০ বছরের ইতিহাস নিয়ে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়ানোর এক মনোরম পরিবেশ এই জমিদারবাড়ি। যে কারও মন কাড়তে পারে এখানকার বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশ। পিচঢালা পথ থেকেই চোখে পড়বে অন্যরকম সুন্দর এই জমিদারবাড়িটি। জমিদারবাড়ির সীমানায় ঢোকার মুখে হাতের ডান পাশে একটি পুকুর পড়বে আর বাঁ-পাশে এক টুকরো খোলা মাঠ। এই মাঠ ধরে একটু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে হাতের বাম পাশের রয়েছে ‘বলিয়াদী ওয়াকফ এস্টেট জামে মসজিদ’। মসজিদটি প্রথম নির্মাণ করা হয় ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু সেই মসজিদটি এখন আর নেই। মসজিদটি পুনঃনির্মিত হয়েছে ১৯৯২ সালে। চার কোনায় চারটি এবং প্রতি বাহুর মাঝে একটি করে মোট আটটি ছোট্ট মিনার রয়েছে এই একতলা বর্গাকৃতির মসজিদটিতে।

হাতের বাম পাশে মসজিদ রেখে সামনে এগিয়ে গেলে রয়েছে মূল জমিদারবাড়ির ভবন। মসজিদ এর ঠিক সম্মুখভাগে রয়েছে পারিবারিক কবরস্থান। এই কবরস্থান আর মূল ভবনের মাঝে রয়েছে ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বলিয়াদী এস্টেটের ‘হেড অফিস’। যেখান থেকে বলিয়াদী এস্টেটের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের ফরমান বলে ইংরেজি ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে সমগ্র কালিয়াকৈর থানা, ধামরাই থানা, সাভার থানা এবং বাসাইল থানা নিয়ে বলিয়াদী এস্টেট প্রতিষ্ঠিত হয়।

তৎকালীন সময়ে কালিয়াকৈর থানার নাম ছিল পরগনা তালেবাবাদ। ধামরাই এবং সাভার থানা একসঙ্গে ছিল। যার নাম ছিল পরগনা চন্দ্রপ্রতাপ। অপরদিকে বাসাইল থানার নাম ছিল পরগনা আমেনাবাদ। বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী এই এস্টেটের দিল্লি মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর কর্তৃক নিযুক্ত বাংলা, বিহার ও ওড়িশার সুবেদার নবাব কুতুবুদ্দিন সিদ্দিকীর পুত্র নবাব সাদ উদ্দিন সিদ্দিকী বলিয়াদী এস্টেটের প্রথম কর্ণধার ছিলেন।

বিএনপি নেতা চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর পূর্বপুরুষ হলেন এই বলিয়াদী জমিদারেরা।

উন্নত বিশ্বে যেসব স্থাপনা হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষিত হয়, আমাদের দেশে সেসব স্থাপনা পড়ে থাকে অবহেলায়, ক্ষয়ে যায়, ঘুণে ধরে বিচূর্ণ হয় ইতিহাসের পাতা থেকে। অপূর্ব সব স্থাপনা আর নির্মাণশৈলী নিয়ে আমাদের বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে পড়ে আছে অসংখ্য জমিদারবাড়ি, রাজবাড়িসহ আরও কত স্থাপনা। কিন্তু এই বলিয়াদী জমিদারবাড়ি তার পরবর্তী প্রজন্মের যতেœ আজো ভালো অবস্থায়ই টিকে আছে অন্যান্য জমিদার বাড়ির তুলনায়।

অপূর্ব নির্মাণশৈলীর এই জমিদারবাড়ির মূল পাঁচিলঘেরা অংশে মাঝখানে ত্রিতল জমিদার বাড়ির মূল কাঠামো। মূল বাড়ির ছাদে রয়েছে সফেদ গম্বুজ, যার চারদিকে প্রতিটি ভিতের মাথায় রয়েছে ছোট ছোট মিনার আকৃতির নকশা। বলিয়াদী অফিসের প্রশাসনিক কার্যালয়ের অনুমতি নিয়ে ভিতরে ঘুরে দেখতে পারেন চারপাশ। এর নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী আপনাকে বিমোহিত করবে। সামনে সবুজ ঘাসের লনে বসে আপনি অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারবেন একটি আনন্দঘন বিকাল। ঢাকা কিংবা যেকোনো জেলা থেকে কালিয়াকৈর চলে আসুন। এখানে এসে রিকশা বা অটোরিকশা যোগে বলিয়াদী জমিদারবাড়ি পৌঁছে যেতে পারেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর