শনিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ইস্টেশন পাঠাগারে চায়ের বিনিময়ে বই পড়া

শুভ্র মেহেদী, জামালপুর

ইস্টেশন পাঠাগারে চায়ের বিনিময়ে বই পড়া

‘ইস্টেশন পাঠাগার’। জামালপুরের তারাকান্দি রেলওয়ে স্টেশনের অভিনব এই পাঠাগারে চা পান করলেই পড়া যাবে বই। রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীরাই মূলত এই পাঠাগারের মূল পাঠক। অভিনব এই ‘ইস্টেশন পাঠাগার’ স্থাপনের উদ্যোগে খুশি যাত্রীরাও। আর উদ্যোক্তারা বলছেন, স্টেশনে অপেক্ষার মতো বিরক্তিকর সময়টা বই পড়ে কাটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মানুষকে বই পড়ায় অভ্যস্ত করতেই তাঁদের এই উদ্যোগ। ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি স্টেশনেই পাঠাগার স্থাপনের পরিকল্পনা তাঁদের।

নিবিড় বিশ্বাস, দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে জামালপুর থেকে সরিষাবাড়ীর তারাকান্দি এলাকায় এসেছিলেন আত্মীয়বাড়ি বেড়াতে। জামালপুর ফিরতে বন্ধুদের নিয়ে তারাকান্দি স্টেশনে অপেক্ষা ট্রেনের জন্য। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে ট্রেন প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে আসায় স্টেশন প্ল্যাটফরমের পাশেই চায়ের স্টলে গেলেন চা খেতে। দোকানদার চায়ের সঙ্গে তিন বন্ধুর হাতেই ধরিয়ে দিলেন বই। চায়ের সঙ্গে বই দেওয়ায় তিন বন্ধুই অবাক, কিছু সময় পর চায়ের স্টলে থাকা বুক শেলফ আর ইস্টেশন পাঠাগারের সাইনবোর্ড দেখে বুঝতে বাকি থাকল না ব্যাপারটা। শুধু নিবিড় বিশ্বাসই নয়, দেড় মাস ধরে তারাকান্দি রেলওয়ে স্টেশনে যাতায়াতকারী অনেক যাত্রীই এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন। ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা এখানে চা খেতে এসে বই পড়তে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত। অযথা সময় নষ্ট না করে বিরক্তিকর সময়টা আনন্দময় করে জ্ঞানার্জনে বেশ সহায়ক এই চায়ের বিনিময়ে বই পড়ার ব্যবস্থা। পাঠকরাও বেশ মনোযোগ দিয়ে নিজের পছন্দের বই পড়তে পড়তে হারিয়ে যান কল্পনার রাজ্যে, রোমন্থন করেন অতীত স্মৃতি। ট্রেনযাত্রী তন্ময় চৌধুরী আর শুভ্র দেব জানান, চায়ের বিনিময়ে বই পড়া-এই উদ্যোগটা সত্যিই চমৎকার। স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় থাকা সময়টা খুবই বিরক্তিকর হয়ে থাকে, কিন্তু এই ইস্টেশন পাঠাগারে বই পড়ে সময়টা দারুণভাবে কাটল। ইস্টেশন পাঠাগারের এই উদ্যোগটা শুধু একটা স্টেশনকেন্দ্রিক না রেখে দেশের সব স্টেশনে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে অনেক ভালো হবে।

চা স্টলে ‘ইস্টেশন পাঠাগার’ স্থাপনের পর থেকে চা খেতে এসে যাত্রীদের বই পড়ে আনন্দ প্রকাশের বিষয়টি জানিয়ে চা স্টলের মালিক মিলন মিয়া বলেন, শুরুতে আসাদ নামে ছেলেটা আমার কাছে এসে দোকানে বই রাখার কথা বললে আমি তাঁর প্রস্তাবে রাজি হই। এখন সময় যতই যাচ্ছে চায়ের ক্রেতা এবং পাঠক দুটোই বাড়তে থাকায় আমি নিজেও অনেক খুশি।

মিলন স্মৃতি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা ও ইস্টেশন পাঠাগারের উদ্যোক্তা আতিফ আসাদ বলেন, পাঠাগারের শুরুটা বাড়ির বারান্দা থেকে হলেও সবার মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতেই ‘ইস্টেশন পাঠাগার’ স্থাপনের উদ্যোগ।  এতে একদিকে যাত্রীরা যেমন চায়ের চুমুকের সঙ্গে বই পড়তে পারবে, তেমনি চা দোকানদারও উৎসাহিত হবে।

সর্বশেষ খবর