শনিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

অনলাইনে নাহিদের ক্যাপসিকামের বাজার

দেশে বসে কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। শেষে ইউটিউব তার পথ খুলে দিল। ইউটিউব দেখে দেখে নাহিদ দেশের মাটিতেই ফলিয়ে ফেললেন বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

অনলাইনে নাহিদের ক্যাপসিকামের বাজার

ছুটিতে দেশে এসেছিলেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী হেদায়েত উল্লাহ নাহিদ। তারপর আটকে গেলেন লকডাউনে। দেশে বসে কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। শেষে ইউটিউব তার পথ খুলে দিল। ইউটিউব দেখে দেখে নাহিদ দেশের মাটিতেই ফলিয়ে ফেললেন বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম।  এ সবজি দেখে অবাক এলাকার মানুষ।

নাহিদের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার মোহনপুর গ্রামে। উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা শেষ না করেই পাড়ি দেন সিঙ্গাপুরে। চার বছর সিঙ্গাপুরে থাকার পর গত বছর ছুটিতে দেশে আসেন। করোনার কারণে আর ফেরা হয়নি। এখন তিনি এক আদর্শ চাষি, অন্যদের অনুপ্রেরণার উৎস।

ইউটিউবের ভিডিও দেখে নাহিদ ক্যাপসিকাম চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কিন্তু কিছুতেই বীজ পাচ্ছিলেন না। তাতে থেমে যাননি। এক ব্যক্তির মাধ্যমে ভারত থেকে ‘ইন্দ্রা’ জাতের ৫০ গ্রাম বীজ আনান। বাড়ির সামনে বীজতলা তৈরি করেন। বীজ বপনের ৪২ দিন পর চারা তুলে জমিতে লাগান। গত ২ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো ক্যাপসিকাম সংগ্রহ করেন।

নাহিদ বললেন, এসবই তিনি শিখেছেন ইউটিউব দেখে। অনলাইনে অর্ডার করে দুই রোল মালচিং পলিথিন আনিয়েছেন কুষ্টিয়া থেকে। দাম পড়েছে সাড়ে ১১ হাজার টাকা। মালচিং করা অংশটির ক্যাপসিকাম গাছগুলো খুব ভালো হয়েছে। প্রচুর ফলও ধরেছে। আর মালচিং না করা অংশটির গাছগুলো তেমন ভালো হয়নি। সেখানে পোকামাকড়-রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। বীজতলা থেকে চারা তোলার পর তিনি স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাকে ফোন করে জানান। কৃষি কর্মকর্তা ক্যাপসিকামের চারা দেখে খুবই খুশি হন। ফল আসার পর এগুলো কোথায় বিক্রি করবেন তা বুঝতে পারছিলেন না নাহিদ। প্রথমে ১০ কেজি ক্যাপসিকাম পাঠান ঢাকায়। দ্বিতীয়বার পাঠান আরও ১৫ কেজি। কিন্তু ঢাকায় দাম পাচ্ছিলেন না। প্রথম চালানের টাকা এখনো পাননি। দ্বিতীয়বারের দাম পেয়েছেন কেজিপ্রতি ৭০ টাকা।

এবার কয়েকটি ক্যাপসিকামের নমুনা নিয়ে ছুটলেন রাজশাহী মহানগরীর মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে। এ বাজারে খুচরায় ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে ক্যাপসিকাম বিক্রি হয়। এগুলো নাহিদের ক্যাপসিকামের চেয়েও ছোট। ব্যবসায়ীরা নাহিদের ক্যাপসিকাম পছন্দ করলেন। এখন নিয়মিত এ বাজারে ক্যাপসিকাম দিয়ে আসছেন নাহিদ। সর্বনিম্ন ১২০ টাকা, সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা দাম পেয়েছেন। নাহিদের স্ত্রী নাজমা ইয়াসমিন ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে ক্যাপসিকাম বিক্রির বিজ্ঞাপন পোস্ট করেন। সেখান থেকেও ক্রেতা মিলছে। জমি থেকে টাটকা ক্যাপসিকাম তুলে ক্রেতাদের হাতে দিয়ে আসেন নাহিদ। এজন্য বাড়তি টাকাও নেন না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভূঁইয়া বলেন, ক্যাপসিকাম চাষ করে সত্যিই অবাক করে দিয়েছেন নাহিদ। আমরা তার সফলতায় মুগ্ধ। ভালো দামও পাচ্ছেন। নতুন ফসলের চাষ বলে আমরা সব সময় খোঁজ রেখেছি।

সর্বশেষ খবর