শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাদের নিয়োগ দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রশাসনিক পদে

বাইডেন প্রশাসনে চার বাংলাদেশি

তাদের এই অন্তর্ভুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় নতুন প্রজন্মের নবযাত্রা হিসেবে দেখছেন অনেকেই। আগামীতে তাদের হাত ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের শেকড় আরও বিস্তৃত হবে। এই চার বাংলাদেশি বাইডেন-হ্যারিসের হোয়াইট হাউসের প্রশাসনে কাজ করবেন...

জামশেদ আলম রনি

বাইডেন প্রশাসনে চার বাংলাদেশি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনে এই প্রথম চারজন বাংলাদেশি নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের এ নিয়োগে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশিরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। তাদের এ অন্তর্ভুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় নতুন প্রজন্মের নবযাত্রা হিসেবে দেখছেন অনেকেই। আগামীতে তাদের হাত ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের শেকড় আরও বিস্তৃত হবে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। এ চার বাংলাদেশি বাইডেন-হ্যারিসের হোয়াইট হাউসের প্রশাসনে কাজ করবেন।

নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী কাজী সাবিল আহমদ। তিনি হোয়াইট হাউসের এক্সিকিউটিভ অফিসের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট বিভাগে ইনফরমেশন অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র কাউন্সিলর পদে যোগ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণকারী সাবিল আহমদ ব্রুকলিন ল’ স্কুলের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ছাড়াও ‘ডেমজ’ নামক একটি থিংক ট্যাংকের প্রেসিডেন্ট। বর্ণ ও জাতিগত সাম্য, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, নীতিগত গবেষণার আলোকে গণতান্ত্রিক চেতনায় সর্বসাধারণকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে কাজ করা এ থিংক ট্যাংকের মাধ্যমেই বাইডেনের নজর কাড়েন সাবিল।

আরেক বাংলাদেশি রুমানা আহমেদ বাইডেনের ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল ইনফরমেশনের রিভিউ প্যানেলের সদস্য পদে যোগদান করেছেন। রুমানা বাইডেনের ট্রানজিশন টিমের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দলে কাজ করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে হোয়াইট হাউসে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে রুমানার।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আট দিনের মাথায় মুসলিম নিষিদ্ধকরণের প্রতিবাদে হোয়াইট হাউসে তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৮ সালে বাবা-মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান রুমানা। রুমানা জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি মায়ের সঙ্গে ম্যারিল্যান্ডে থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আন্ডার সেক্রেটারির চিফ অব স্টাফ পদে নিয়োগ পান নরসিংদীর মেয়ে ফারাহ আহমেদ। ফারাহ কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর এবং নিউজার্সির প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন। তিনি ইউএসডিএতেও কাজ করেছেন। তিনি কনজুমার এডুকেশন কার্যালয়ের সিনিয়র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এবং কনজুমার ফাইন্যান্সিয়াল প্রোটেকশন ব্যুরোর সিনিয়র অ্যাডভাইজর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার পিতা ড. মাতলুব আহমেদ ও মা ড. ফেরদৌস আহমেদ। তারা দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। ফারাহ আহমেদের নানা ড. আবদুল বাতেন খান বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান ফারাহর মামা।

এর আগে বাংলাদেশি বংশো™ূ¢ত আমেরিকান জেইন সিদ্দিক হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফের সিনিয়র অ্যাডভাইজার হয়েছেন। তিনি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ও ইয়েল ল’ স্কুল থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। নিউইয়র্কে বেড়ে ওঠা জেইনের কর্মজীবন শুরু হয়েছে ইউএস সুপ্রিম কোর্টের জজ ইলেনা ক্যাগন ও ইউএস কোর্ট অব আপিলের জজ ডেভিড ট্যাটেলের সঙ্গে কাজের মাধ্যমে। জেইন খ্যাতনামা ল’ ফার্ম ওরিক হেরিংটন অ্যান্ড সাটসলিফ এলএলপির সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছেন।

বাইডেন-কমলা ট্র্যানজিশন টিমে ডমেস্টিক অ্যান্ড ইকোনমিক বিভাগের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায়ই এ নিয়োগ পেলেন জেইন। জানা যায়, জাইন সিদ্দিকের পৈতৃক বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের মাদারীনগর গ্রামে। মার্কিন প্রশাসনে নিযুক্ত হওয়ায় জেইন সিদ্দিকের গ্রামের বাড়িতে আনন্দের বন্যা বইছে। খবরটি জানার পর দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়স্বজন ছুটে আসেন তার গ্রামের বাড়িতে। তার জন্য শুভ কামনা জানিয়ে গ্রামের মসজিদ, মাদ্রাসায় দোয়ার আয়োজনসহ মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। সবাই বলছেন, জেইন সিদ্দিক শুধু নান্দাইলের নন, ময়মনসিংহের তথা বাংলাদেশের গর্ব। জেইন সিদ্দিকের বাবার নাম মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকী ও মা হেলেনা সিদ্দিক। তারা চিকিৎসক দম্পতি। তাদের একমাত্র ছেলে জেইন সিদ্দিক। প্রায় ৩৩ বছর আগে তারা পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই জন্ম হয় জেইনের। তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন তার দাদি মাজেদা আক্তার। ২০১৬ সালের এপ্রিলে বাবাকে নিয়ে বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন  জেইন সিদ্দিক।

 

 

সর্বশেষ খবর