শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

লবণাক্ত জমিতে সুদিন ফিরেছে কৃষকের

১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টরের বিশাল জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি


লবণাক্ত জমিতে সুদিন ফিরেছে কৃষকের

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত পতিত জমিতে ফসল উৎপাদন এক সময় কল্পনাও করা যেত না। এখন সেই লবণাক্ত জমিতেই ফলছে তরমুজ, ভুট্টাসহ নানা ফসল ও সবজি। এ যেন অন্যরকম এক সবুজের সমারোহ। এভাবে অনাবাদি জমিকে আনা হচ্ছে চাষাবাদের আওতায়। এতে এ অঞ্চলের কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এক সময় যে জমিতে লবণের আবরণ জেগে উঠত, সেই জমি এখন সবুজে ঘেরা। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশে মোট ৮৪ লাখ হেক্টর অনাবাদি জমি রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেই রয়েছে প্রায় ২৫ লাখ হেক্টর জমি। এ জমির প্রায় অর্ধেকই লবণাক্ত। মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)-এর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ ১৮টি জেলার ৯৩টি উপজেলায় লবণাক্ত জমির পরিমাণ ১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর, যা গত এক দশকের তুলনায় ২৩ হাজার হেক্টর বেড়েছে। আর ১৯৭৩ সালে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর। এ হিসাবে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে লবণাক্ত জমির পরিমাণ। কিন্তু এ জমিকেই এখন আনা হচ্ছে চাষাবাদের আওতায়। যদি ১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টরের বিশাল এ জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনা যায়, তাহলে দেশের কৃষিতে বলা চলে বিপ্লব ঘটবে। যেসব এলাকার জমিতে আগে একটি ফসল হতো, সেখানে হবে দুটি ফসল। এতে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাগরের লোনাপানি উপকূলীয় এলাকায় ঢুকে জমি লবণাক্ত করে তুলছে। জোয়ারের কারণেও উপকূলীয় বিস্তীর্ণ এলাকা লবণাক্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানি তীর থেকে উপকূলের ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে। ফলে এ অঞ্চলের উর্বর জমি ধীরে ধীরে লবণাক্ত হয়ে চাষের অনুপযোগী হচ্ছে। গত দশকে শুকনো মৌসুমে এসব এলাকায় তিল ও মুগ ডালের চাষাবাদ হতো। কিন্তু অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে তিল ও ডাল ঘরে তোলার আগেই মাঠ নষ্ট হয়ে যেত। ফলে শুকনো মৌসুমে জমি পতিত অবস্থায় থাকত।

জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলে কৃষির উন্নয়নে সরকার ১০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। ২০১৪ সালে নেওয়া এ পরিকল্পনায় অগ্রাধিকারভুক্ত খাত হিসেবে ফসল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, পুষ্টি, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, কৃষি বাণিজ্য, কৃষি ঋণ, কৃষি খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৫৭ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর