শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

গরুর গাড়ির গল্প

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

গরুর গাড়ির গল্প

দুই যুগ আগেও গরুর গাড়িতে চড়ে বর-বধূ যেত। গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে কল্পনাও করা যেত না। বিয়ে বাড়ি বা মালামাল পরিবহনে গরুর গাড়ি ছিল একমাত্র পরিবহন। গরুর গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। আর তাই চালককে উদ্দেশ করে রচিত হয়েছে-  ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ কিংবা ‘আস্তে বোলাও গাড়ি, আরেক নজর দেখিয়া ন্যাং মুই দয়ার বাপের বাড়িরে গাড়িয়াল’ এ রকম যুগান্তকারী সব ভাওয়াইয়া গান। তবে বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এ যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। গরুর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রিস্টজন্মের ১৫০০-১৬০০ বছর আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল। যা সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে এ জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ বহনের জনপ্রিয় বাহন ছিল গরুর গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এ বাহন। মাঝে-মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরুর গাড়ি চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না।

গরুর গাড়ি দুই চাকাবিশিষ্ট। গরু বা বলদে টানা এক প্রকার বিশেষ যান। এ যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সঙ্গে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। গাড়ির সামনের দিকে একটি জোয়ালের সঙ্গে দুটি গরু বা বলদ জুটি মিলে গাড়ি টেনে নিয়ে চলে। সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে, পেছনে বসেন যাত্রীরা। বিভিন্ন মালপত্র বহন করা হয় গাড়ির পেছন দিকে। কৃষিজাত দ্রব্য ও ফসল বহনের কাজে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল ব্যাপক। মানুষ প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা ইত্যাদি। গরুর গাড়ির একটি সুবিধা হলো এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের ক্ষতিও করে না। এটি পরিবেশবান্ধব যানবাহন। যুগের পরিবর্তনে আমাদের প্রিয় এ গরুর গাড়ির প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর