শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনার অবসরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অন্যরকম উদ্যোগ

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফল তিন শিক্ষার্থী

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

করোনার অবসরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অন্যরকম উদ্যোগ

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন পঞ্চগড়ের তরুণ উদ্যোক্তারা। অল্প জমির ওপর স্বল্প খরচে অনেক লাভ হওয়ার কারণে তরুণ উদ্যোক্তারা এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। করোনা সংকটের দিনে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে বেশ কিছু শিক্ষার্থী বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করেন। তারাই এখন বিভিন্ন এলাকায় বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। মাছ চাষিদের সংগঠিত করেছেন। জেলার দেবীগঞ্জ, বোদা, আটোয়ারী এবং সদর উপজেলার বেশ কিছু উদ্যমী তরুণ এই পদ্ধতি ব্যবহার করে মাগুর, কই, শিং, পাবদা, তেলাপিয়াসহ নানা রকমের মাছ চাষ করছেন। দেবীগঞ্জ উপজেলা শহরে আহনাফ আবিদ প্রধান কৌশিক গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পড়ালেখা করেন।

করোনাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বাড়ি ফিরে এসে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন। তার বাড়ির আঙিনাজুড়ে প্রথমে একটি চৌবাচ্চায়  শুরু করেন তিনি। শুরুতেই লাভের মুখ দেখেন। পরে আরও কয়েকটি চৌবাচ্চায় মাছ চাষ শুরু করার পাশাপাশি এলাকার তরুণদের উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। এই উপজেলায় এখন ৯০ চাষি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন। তারা একটি সমিতিও করেছেন। দেবীগঞ্জ উপজেলা বায়োফ্লক ফিশ ফার্মিং এ টু জেড নামের ওই সংগঠনটি মাছ চাষিদের সংগঠিত করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রযুক্তি সরবরাহ করছেন। কৌশিক জানান, পাঁচ হাজার লিটার পানির একটি চৌবাচ্চায় ন্যূনতম তিন হাজার মাছ চাষ করা সম্ভব। বছরে তিনবার চাষ করে ২০ হাজার টাকা অনায়াসে লাভ হয়। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে বাড়ির ছাদে, আঙিনা বা পতিত জমিতে চাষ করা যায়। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে বাড়ি ফিরে কিছু একটা করার তাড়না থেকেই বায়োফ্লক পদ্ধতি বেছে নিই। এরপর এলাকার তরুণদের সংগঠিত করি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফারুখ খন্দকার জানান, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে ফিরে আসি। বাড়িতে বসেই বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে লাভের মুখ দেখেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে সদ্য পাস করা ছাত্র আরিফ হোসেন জেলা শহরের বাড়ির আঙিনায় দুটি চৌবাচ্চা স্থাপন করেছেন। সেই সঙ্গে স্থাপন করেছেন ফ্রেস ফিশ নামে একটি ট্রেনিং সেন্টার। তিনি বলেন, পঞ্চগড় জেলার আবহাওয়া বায়োফ্লক পদ্ধতির জন্য একটি আশীর্বাদ। এখানে পানিতে লবণাক্ততা নেই। মিঠাপানিতে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে সহজেই মাছ চাষ সম্ভব। ট্রেনিং সেন্টারে গত ছয় মাসে ৫০ জনেরও বেশি তরুণ, চাকরিজীবী এবং কৃষক বায়োফ্লক পদ্ধতি বিষয়ে ট্রেনিং নিয়েছেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ সিরাজী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বায়োফ্লক উদ্যোগ এই এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। পঞ্চগড়ে বায়োফ্লক  পদ্ধতিতে মাছ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর