শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রত্যন্ত গ্রামে আধুনিক পাঠাগার

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

প্রত্যন্ত গ্রামে আধুনিক পাঠাগার

নওগাঁর ধামইরহাটে ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে আধুনিক সংবলিত পাঠাগার। পাঠাগারটি গ্রামে হলেও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেখানে। মানুষ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পাঠাগারটি উপজেলার আগ্রাদ্বিগুণ বাজারে স্থাপিত হয়েছে। এ পাঠাগার থেকে শত শত শিক্ষার্থী ও বইপ্রেমী উপকৃত হবে। পাঠাগারটির নকশা প্রণয়ন করেছেন দেশের সুনামধন্য স্থপতি নগরবিদ মো. ইকবাল হাবীব। উপজেলার আগ্রাদ্বিগুণ ইউনিয়নের বার বার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবর রহমানের মৃত্যুর পর তার সন্তানরা মুজিবর রহমান মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ওই ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ধামইরহাট ও পত্নীতলা উপজেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তির ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দুর্যোগ মুহূর্তে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মানুষকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ওই ফাউন্ডেশনের অঙ্গ সংস্থা মুজিবর রহমান স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে এ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

মুজিবর রহমান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি এবং মানবিক মানুষ গড়ার লক্ষ্যে তিনি এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি মানুষের উৎসাহ, আগ্রহ সৃষ্টি এবং জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ গড়ে তুলতে পাঠাগারের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সমাজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সব পেশার মানুষ বই পড়ার প্রতি বিমুখ হয়ে পড়ছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চা না থাকলে ভালো মানুষ হওয়া যায় না। তাছাড়া কিশোর-কিশোরীদের মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করতে হলে বই পড়ার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। আগ্রাদ্বিগুণ বাজার ধামইরহাট, পত্নীতলা ও সাপাহার উপজেলার মধ্যস্থলে অবস্থিত। এই এলাকায় বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদরাসা রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থীর জন্য পাঠাগারে বসে পড়ার মতো মানসম্মত কোনো স্বতন্ত্র পাঠাগার নেই। বই পড়ার প্রতি মরহুম বাবার অনুপ্রেরণায় আমাদের ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এলাকায় গুণী মানুষ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আগ্রাদ্বিগুণ বাজারে নিজস্ব জায়গায় তিনতলা বাসার দ্বিতীয় তলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে এ পাঠাগারটি গড়ে তোলা হয়েছে। জায়গা বাদে প্রাথমিক অবস্থায় এ পাঠাগার স্থাপন করতে প্রায় ১০-১১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সব প্রস্তুতি শেষে অল্প সময়ের মধ্যে পাঠাগারটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এ পাঠাগারে এক সঙ্গে ৩৫ পাঠক পড়াশোনা করতে পারবেন। এখানে সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, বিনোদন, শিশুসাহিত্য, বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকাসহ দেশ-বিদেশের দুর্লভ বাংলা ও ইংরেজি বই থাকবে। পাঠাগারে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কর্নার, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ কর্নার, ক্রীড়াবিষয়ক ও শিশু কর্নার থাকবে। ক্রীড়াবিষয়ক কর্নারে যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করবেন ঢাকার একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শফিকুর রহমান শুভ। সব শ্রেণির দুর্লভ পাঠ্যবই থাকবে। এ ছাড়া মাসে একবার সাহিত্য আসর এবং প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা থাকবে। বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা বিষয় সম্পর্কে প্রতি ১৫ দিন পর পর প্রজেক্টরের বড় পর্দায় ডকুমেন্টারি বাংলা ও ইংরেজি সিনেমা প্রদর্শন করা হবে। ইতিমধ্যে পাঠাগারের জন্য বই সংগ্রহ চলছে। এলাকাবাসীর স্বপ্নের পাঠাগারে বই প্রদান করেছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও লেখক আবুল মকসুদ, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি এমপি, দেশবরেণ্য স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, স্থপতি ইকবাল হাবীব, সমাজকর্মী রিনা খানম, বিশিষ্ট সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া প্রমুখ। ধামইরহাটের চকময়রাম মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম খেলাল-ই-রব্বানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মননশীল, বিবেকবান, উৎকর্ষ সাধিত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ গড়ার একমাত্র জায়গা হলো পাঠাগার। ১ হাজার বই সমান একজন বন্ধু আর বই পড়া একজন বন্ধু সমান ১ হাজার পাঠাগার। ভালো মানুষ তৈরি করতে হলে বই পড়ার বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর