শনিবার, ৬ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
বাংলাদেশি তাহমিনা এখন

যুক্তরাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ প্রধান শিক্ষক

জামশেদ আলম রনি

যুক্তরাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ প্রধান শিক্ষক

যুক্তরাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তাহমিনা বেগম। ৩৩ বছর বয়সে তিনি এই গৌরব অর্জন করেন। তাহমিনা বর্তমানে পূর্ব লন্ডনের ফরেস্ট গেট সেকেন্ডারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি একাডেমিক টিউটর হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে স্যার জন কাস সেকেন্ডারি স্কুলে। এরপর ফরেস্ট গেট স্কুলে ইংরেজির সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০১৭ সালে ইংরেজির ইনচার্জ হিসেবে সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে ডেপুটি হেড ইনচার্জ এবং বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন লালন করেন। শিক্ষকতাকে মহৎ পেশা হিসেবে মনেপ্রাণে ধারণ করতেন।

কনিষ্ঠতম প্রধান শিক্ষকের মর্যাদায় ভূষিত হয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত তাহমিনা বলেন, শিক্ষকতাকে বরাবরই উপভোগ করি। করোনা মহামারী কাটিয়ে আবার সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে, আবার মনভরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সময় কাটাবেন- এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি। ছোট বয়স থেকেই তাহমিনা শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার এইম ইন লাইফ ছোটবেলা থেকেই ঠিক করে নিয়েছিলাম। শিক্ষক হওয়াই ছিল আমার স্বপ্ন। স্কুল আমার কাছে অনেক মজার বিষয়। স্কুলে আমি বিতর্ক ও প্রেস টিমে ছিলাম। এই প্রেস টিম বন্ধুদের অসাধারণ একটি গ্রুপ। আমার মতো আমার পরিবারও বিশ্বাস করে, শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। আসলে পরিবার থেকেই আমি একটি শক্তিশালী কাজের নৈতিকতা নিয়ে বেড়ে উঠেছি। তাই শিক্ষক হওয়া আমার কাছে অসাধারণ একটি ব্যাপার। কারণ আমার বড় ভাই এবং বোনও শিক্ষক।’

মনোবিজ্ঞান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে পেশা শুরু করেন জানিয়ে তাহমিনা বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলাম। পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় বেড়ে উঠি। সেখানকার স্যার জন কাস সেকেন্ডারি স্কুলে একজন একাডেমিক টিউটর হিসেবে আমি কাজ শুরু করি। স্কুলটি বর্তমানে স্টেপনি অল সেইন্টস স্কুল নামে পরিচিত। ছেলেমেয়েরা ছিল চমৎকার, শিক্ষকরাও ছিলেন মেধাবী। তাই আমিও শিক্ষক হতে আগ্রহী হই। প্রশিক্ষণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিই। স্যার জন কাস স্কুলে শ্যাম উদ্দীন ছিলেন আমার প্রথম মেন্টর, সবচেয়ে বড় সমর্থক ও বন্ধু। পরে শ্যাম ইংরেজির প্রধান হিসেবে ফরেস্ট গেইট স্কুলে যোগ দেন। আমি সেখানে ইংরেজির দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। দুঃখজনকভাবে ২০১৭ সালে শ্যাম মারা যান। এতে দায়িত্ব এসে পড়ে আমার ওপর। তিনি অসুস্থ থাকাকালে আমি ইংরেজির ইনচার্জ হিসেবে সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করি। ২০১৮ সালে আমি ডেপুটি হেড ইনচার্জ অব টিচিং অ্যান্ড লার্নিং নিযুক্ত হই। এরপর ২০১৯ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব লাভ করেন বলে জানান তিনি।  আমি এমন একটি কমিউনিটির সেবা করতে সক্ষম হই, যারা আমার হৃদয়ের অত্যন্ত কাছাকাছি। তিনি আরও বলেন, যে পেশায়ই থাকি না কেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। ২০২১ সাল একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে আমি স্কুলের বাচ্চাদের গুড মর্নিং বলতে পারছি না, তাদের সঙ্গে করিডোরে গল্পও করতে পারছি না। তারপরও সর্বোত্তম উপায়ে স্কুল পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।

তাহমিনার সব ব্যস্ততা শিক্ষকতাকে কেন্দ্র করেই। প্রতিদিন রাত ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সাড়ে ৫টায় ওঠেন। সপ্তাহে একটি ক্লাসে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সকালে রুটিন করে স্কুলে যান। স্কুল থেকে ফিরে ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য জিসিএসই স্টাডি গ্রুপ পরিচালনা করেন। নিয়মিত স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক এবং কর্মীদের খোঁজখবর নেন। ওজন কমানোর জন্য ভর্তি হয়েছেন জিমে। সপ্তাহে দুই দিন নিয়ম করে যান জিমে। এত কিছুর পরও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ভোলেন না তিনি। পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খান। সকালের নাশতাও করেন পরিবারের সঙ্গে। এর ফাঁকে গুরুত্বপূর্ণ মেইল চেক করেন। ছুটির দিনে ঘুরতে যান পরিবারের সঙ্গে। এরপর ২০ মিনিট ড্রাইভ করে পৌঁছে যান নিজের স্কুলে। তারপর কাজে ডুব দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফাঁকা ক্যাম্পাস ভালো লাগে না তাঁর। মনে পড়ে প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের মুখ। মনে হয়, এই তো তারা যেন বারান্দায় হৈ-হুল্লোড় করছে! মাঠজুড়ে তাদের উল্লাস। কিন্তু না, করোনা সব কিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে। তবু তাহমিনা দক্ষ হাতে সামলাচ্ছেন নিজের স্কুল। তিনি বলেন, ‘লকডাউন বদলে দিয়েছে রুটিন। পরিবর্তন এসেছে আমার দিনের কর্মসূচিতে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন বাড়িতে। কিন্তু আমি এখনো প্রতিদিন স্কুলে যাই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা করি। অচিরেই আমি স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের দেখতে পাব।  খেলার মাঠে শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাব। তাদের পদচারণায় ভরে উঠবে  প্রাঙ্গণ।’

সর্বশেষ খবর