শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

দুই দশক ধরে গরিবদের বিনামূল্যে খাওয়াচ্ছেন আজগর

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

দুই দশক ধরে গরিবদের বিনামূল্যে খাওয়াচ্ছেন আজগর

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দুপুরে গরিব ও অসহায় মানুষকে একবেলা ফ্রি খাওয়ান নওগাঁর হোটেল ব্যবসায়ী আলী আজগর। চেষ্টা, শ্রম এবং সাধনার মাধ্যমে জয় করা যায় সেটাই প্রমাণ করেছেন তিনি। নিজে এক সময় গরিব ছিলেন বলে গরিব, অসহায়, ভিক্ষুক, এতিম ও ভবঘুরে মানুষকে সপ্তাহে অন্তত একবেলা পেটভরে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। বিনিময়ে টাকা নেন না। এতে গরিববান্ধব হিসেবে এলাকায় তার বেশ সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।

 

হোটেল ব্যবসায়ী আজগরের বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার মহেষচন্দ্রপুর গ্রামে। বর্তমানে জমি কিনে নওগাঁ শহরের চশরামচন্দ্র মহল্লায় বসবাস করছেন। নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আদালত চত্বরের গেটের প্রধান ফটকের বিপরীতে রাস্তার পশ্চিম পাশে হাজী নজিপুর হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউস নামে দোকানটি তার।

হোটেল মালিক আলী আজগর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খুব অভাবের মধ্য দিয়ে কোনো রকমে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। বাবা দুটি বিয়ে করেন প্রথম পক্ষের চারটি মেয়ে আর দ্বিতীয় বিয়ে করেন আমার মাকে। তার ছয় ছেলে সন্তান। ছয় ভাইয়ের মধ্যে আমি ছোট। বয়স যখন ১৫ বছর তখন বাবা মারা যান। এরপর ২৪ বছর বয়সে আমি বিয়ে করি। এক বছর পর আমাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান আসে। অভাবের সংসার অন্যদিকে আমাদের যৌথ পরিবারে ভাইবোনদের নিয়ে পারিবারিক নানা কলহ লেগেই থাকত। এরই একপর্যায়ে ১৯৯৭ সালে মা এবং ভাইবোনদের ওপর অভিমান করে স্ত্রী ও ছয় মাসের সন্তানকে নিয়ে নওগাঁয় এসে মল্লিকা নামে এক হোটেলে দিনে ২৫ টাকা বেতনে কাজ শুরু করি। বেশ কয়েক বছর হোটেলে কাজ করলাম। হঠাৎ একদিন হোটেল মালিক নওগাঁর পত্নীতলার আলীম উদ্দিন তার ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। পরে হোটেল মালিককে বুঝিয়ে নিয়ে আসি এবং তার দোকান চালানোর জন্য অনুমতি নেই। মালিক বললেন, যদি দোকান চালাতে পার তাহলে চালাও।

এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। এরপর ২ কেজি, ৫ কেজি গরুর মাংস বিক্রি থেকে শুরু করে এরপর অনেক কষ্ট করে আজ পুরোদমে আমি প্রতিষ্ঠিত হোটেলের মালিক। বর্তমানে বেশ কয়েকজন হোটেলে কর্মচারী সকাল-বিকাল দুই শিফটে কাজ করেন। শহরে মাথাগোঁজার একটু জায়গা হয়েছে। ছেলে ও মেয়ে পড়াশোনা করছে। যেখানে সপ্তাহে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। সপ্তাহে প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে ৩০০ থেকে ৪০০ জন গরিব শ্রেণি বিশেষ করে ভিক্ষুকদের পেটভরে ফ্রি তে খাওয়ান। এ ছাড়াও অন্য দিনে কোনো গরিব অসহায় মানুষ আসে তবে তাদেরও টাকা না নিয়ে খাওয়ান। খাবার মেন্যুতে থাকে মাছ, মাংস, ডিম, ভর্তা, সবজি ও ডাল। হোটেলের সামনে চেয়ার-টেবিলে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমে দেখলে মনে হতে পারে কোনো ছোটখাটো একটি অনুষ্ঠান। এভাবে গত ২০ বছর ধরে মানুষদের একবেলা খাবার দিয়ে আসছেন তিনি। হোটেলে খেতে আসা জাহেরা বেওয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘খুব গরিব মানুষ বাপো পরিবার থাকা হামাক কেউ দ্যাখে না। ভিক্ষা করা খাই আর বৃহস্পতিবার আসা আজগর বাপোর হোটেলত পেটভরা খাই কোনো ট্যাকা ল্যাই না।’ বয়োজ্যেষ্ঠ শেফালি বেগম ও তাহের আলীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, গরিব মানুষ। ভিক্ষা করে ভালোমন্দ খেতে পারি না। তিন-চার বছর ধরে এ হোটেলে নিয়মিত খেতে আসি। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা করে প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার দুপুরে এসে কখনো গোশত ও কখনো মাছ দিয়ে পেটভরে খাবার খাই। আজগরের মতো সমাজের বিত্তবানরা এ ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে এলে দেশের চিত্র অনেকটাই পরিবর্তন করা সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন মহল।

সর্বশেষ খবর