শনিবার, ২০ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রাণীর জন্য ভালোবাসা

রাস্তায়-অলিতে-গলিতে আশ্রয়হীন কাটে অনেক কুকুর কিংবা বিড়ালের। শুধু তাই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণীদের ভাগ্যে জুটে অত্যাচার-নির্যাতন। কুকুরের পা ভেঙে দেওয়া, চামড়া ঝলসানো, মাথা ফাটানো, চোখ উপড়ানো এবং পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটে। কিন্তু এমন অবহেলিত প্রাণীদের রক্ষায় ভালোবাসার ডালি সাজিয়েছে অ্যানিম্যাল কেয়ার অব চট্টগ্রাম (এসিসি) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

প্রাণীর জন্য ভালোবাসা

অ্যানিম্যাল কেয়ার অব চট্টগ্রামের (এসিসি) যাত্রা শুরু ২০১৫ সালে। তবে পুরোদমে কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। সংগঠনটি রাস্তার কুকুর-বিড়ালের সুস্থ জীবন নিশ্চিত, সময়মতো প্রতি বছর টিকা দিয়ে জলাতঙ্ক রোধ করা, বংশবিস্তার কমাতে নিউটার স্প্রের ব্যবস্থা করা, অসুস্থ, আহত, নিষ্ঠুরতার শিকার হওয়া প্রাণীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া এবং সংঘটিত নির্যাতন রোধে এলাকাভিত্তিক জনসচেতনামূলক কাজ পরিচালনা করছে। প্রাণীর চিকিৎসা দিতে চালু করা হয়েছে একটি শেল্টার হোম। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৫০-এর বেশি প্রাণীকে রেসকিউ এবং ২ হাজারের অধিক প্রাণীকে সেবা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সংগঠনের সদস্য ৩০ জন।

এর মধ্যে কিছু সদস্য আর্থিকভাবে সাহায্য করেন, কিছু সদস্য মাঠ পর্যায়ে রেসকিউ, স্পট সেবা ও ক্যাম্পেইন করেন। সংগঠনের সব সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থী। আগামীতে সংগঠনের উদ্যোগে বড় একটি শেল্টার ও প্রাণীদের চিকিৎসায় একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। যেখানে দিনরাত বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

অ্যানিম্যাল কেয়ার অব চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা সুমি বিশ্বাস বলেন, ছোটবেলা থেকে প্রাণীদের নিয়ে আমার বেড়ে ওঠা। ওদের লালন-পালন ও চিকিৎসা দেওয়ার কাজ করেছি। পরিবারে কুকুর, বিড়াল ও গরু-ছাগল পালন করা হতো। প্রথমদিকে পরিবারে পোষ্যগুলোর জন্য সময় দিতাম। কার্যত তখন থেকে প্রাণীদের জন্য মনে ভালোবাসাটা তৈরি হয়। ২০১৯ সালে নিজের ঘরের পোষ্যদের রাখতে বাবা একটা জায়গা নির্ধারণ করে দেন। পরে তা রেসকিউ শেল্টার হিসেবে গড়ে তুলি। এখানকার সংক্ষিপ্ত পরিসরেই চলছে রেসকিউ। তিনি বলেন, করোনার সময় দেখা  গেল, সবাই যখন গৃহবন্দী, রাস্তাঘাট মানবশূন্য, তখন কুকুরগুলো শহরে ঘুরে বেড়াত মানুষের উচ্ছিষ্টের আশায়। কিন্তু তা মিলত না। তখন চিন্তা করলাম কীভাবে প্রাণীগুলোর খাবারের ব্যবস্থা করা যায়। তখন প্রথমে নিজের বাসা এবং শেল্টারে রান্না করে গাড়িতে করে বিভিন্ন এলাকায় খাবার দিয়েছিলাম। এরপর এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে খাবার রান্না ও বিতরণ করা হয়। তবে পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে স্থানীয় মানুষও খাবার দিতে শুরু করেন।

সংগঠনের কো-ফাউন্ডার আবির বিশ্বাস বলেন, আমরা বলছি না, নিজ বাসায় আশ্রয় দিতে। কিন্তু কেউ যেন নির্যাতন না করে, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অহেতুক পাথর না ছুঁড়ে, গরম পানি না ঢালে কিংবা পিটিয়ে না মারে। মনে রাখতে হবে, তাদেরও মানুষের মতো প্রাণ আছে। মানুষের ওপর অত্যাচার হলে, কেউ গরম পানি ঢাললে, কোপ মারলে, পিটিয়ে মারলে যেমন যন্ত্রণা পায়, তেমনি প্রাণীদের ওপর করলেও কষ্ট হয়। ক্ষুধার যন্ত্রণা যেমন মানুষের হয়, তেমনি তাদেরও হয়। এরা সারা দিন এক ডাস্টবিন থেকে আরেক ডাস্টবিনে ছুটে বেড়ায় কেবল সামান্য একটু খাবারের আশায়। তাই সমাজের মানুষের কাছে একটাই প্রত্যাশা, আপনারা এগিয়ে আসুন। সদস্যরা বলেন, প্রাণী নিয়ে কাজ করার বিষয়টি শুনতে সহজ মনে হলেও আসলে কঠিন। একটা অসুস্থ কুকুর রেসকিউ করা অনেক কঠিন। ফলে স্বভাবতই আতঙ্কিত হয়ে থাকে। তার ওপর মানুষের দ্বারাই প্রাণীগুলো বেশির ভাগ নির্যাতিত হয়। তারা মানুষদের বিশ্বাস করতে চায় না। তাই রেসকিউ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় চাইলেও রেসকিউ করা যায় না। তাছাড়া সদস্যরা কেউ প্রফেশনাল রেসকিউয়ার নন। নিজের সেফটি বজায় রেখে কাজ করতে হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর