শনিবার, ২০ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বইবন্ধু

কাঠমিস্ত্রি জসিম উদ্দিন

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

বইবন্ধু

বাঁয়ে বইবন্ধু কাঠমিস্ত্রি জসিম। নিচে তাঁর গড়ে তোলা পাঠাগার

ছোটবেলায় পড়াশোনার প্রতি অসম্ভব ঝোঁক ছিল তাঁর। কিন্তু সংসারের অনটনের কাছে হার মানতে হয়েছে তাঁকে। দ্বিতীয় শ্রেণি পাসের পর পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়। পরিণত বয়সে পেশা হিসেবে বেছে নেন কাঠমিস্ত্রির কাজ। তবে অল্প বয়সে পড়াশোনার পাঠ চুকলেও বইয়ের প্রতি ছোটবেলার সেই দুর্বলতা কাটাতে পারেননি তিনি। অল্প অল্প করে পয়সা জমিয়ে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন একটি পাঠাগার। যেখানে ঠাঁই পেয়েছে বিভিন্ন ধরনের ২ হাজারের বেশি বই। এই বইপাগল মানুষটির নাম জসিম উদ্দিন। বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বিলজানি গ্রামে। জসিম উদ্দিন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াকালে বাবা নিরুদ্দেশ হন। অভাব-অনটনের সংসার। তাই পড়ালেখা অসমাপ্ত রেখেই সংসারের হাল ধরতে হয় তাঁকে। যোগ দেন রাজমিস্ত্রির কাজে। কিন্তু বই পড়ার প্রতি আগ্রহ থেকেই গেছে। কাজের ফাঁকে হাতে তুলেন পত্রিকা কিংবা গল্প-উপন্যাস। বইয়ের প্রতি নিজের আগ্রহের পাশাপাশি জ্ঞানের বিস্তারে উদ্যোগী হন তিনি।

রাজমিস্ত্রির কাজ করে যা আয় হয় তার একটি অংশ তিনি বইপ্রেমীদের জন্য বরাদ্দ রাখেন। ২০১৬ সালের দিকে নিজ বাড়ির আঙিনায় গড়ে তোলেন ছোট্ট একটি লাইব্রেরি। মেঝে কাঁচা, চার চালা টিনশেডের এই ঘর এখন তাঁর আদর্শ। ঘরের ভিতর ছোট ছোট র‌্যাক। তাতে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, শিশুতোষ বই। রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসসহ হরেক রকমের বইও। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অবসর সময়ে এই লাইব্রেরিতে ছুটে আসেন বয়স্ক মানুষও। জসিম উদ্দিনের ছোট্ট এই লাইব্রেরি এখন পরিণত হয়েছে জ্ঞানপিপাসুদের আড্ডাখানায়। অনেকে পাঠাগারে এসে বই পড়েন। জসিম সারা দিন কারখানায় কাজে ব্যস্ত থাকেন। তবে বিকালে কাজ শেষে বাড়ি ফিরে পাঠাগারে গিয়ে বসেন। সে সময় বিভিন্ন বয়সী মানুষ সেখানে বই পড়তে আসেন। এ ছাড়া দিনের বেলায় অনেকেই বই নিতে পাঠাগারে আসেন। সে সময় পাঠাগারটি সামলান জসিমের স্ত্রী পপি খাতুন। সরকারি অনুদান পেলে পাঠাগারটি আরও বড় করার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান জসিম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর