শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বিনা পয়সায় ইংরেজি শেখান খালিদ

মাহবুবুল হক পোলেন, মেহেরপুর

বিনা পয়সায় ইংরেজি শেখান খালিদ

পেশায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। যিনি এলাকায় পরিচিত ইংরেজি শিক্ষার কারিগর হিসেবে। নিজ উদ্যোগে বিনা পয়সায় স্থানীয় হতদরিদ্র ছেলেমেয়েদের শেখাচ্ছেন ইংরেজি ভাষা। সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছেন জ্ঞানের আলো।

মেহেরপুরে স্বেচ্ছায় আলো ছড়াচ্ছেন শিক্ষক খালিদ মোশারফ। শহরের স্টেডিয়াম থেকে একটু সামনে এগোলেই একটি লিচু বাগান। বাগানটি পেরিয়ে ছোট্ট গলি, এ গলিতে ঢুকলেই চোখে পড়বে একটি বহুতল ভবন। যেখানে সাঁটা আছে একটি সাইনবোর্ড, তাতে লেখা আছে এখানে ‘বিনা পয়সায় ইংরেজি শেখানো হয়’।

নিঃস্বার্থভাবে  সমাজের দরিদ্র ছেলেমেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন খালিদ মোশারফ। পেশায় তিনি মেহেরপুর সদর উপজেলার সুবিদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। যিনি এলাকার শিশু-কিশোরদের শেখাচ্ছেন ইংরেজি ভাষা শিক্ষা। প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ইংরেজি শিক্ষা ও নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দিচ্ছেন এ প্রাইমারি শিক্ষক।

খালিদ মোশারফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই ই আর বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করেন। শিক্ষাজীবন শেষে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কিন্তু তৃপ্তি মেলেনি কোথাও। অবশেষে শিক্ষকতার মতো মহৎ পেশাকে বেছে নেন। সুবিদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মাধ্যমে শুরু করেন নতুন যাত্রা। পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে দক্ষ করে গড়ে তুলছেন। যার জন্য নিচ্ছেন না কোনো রকমের বেতন বা ভাতা। তবে কোনো শিক্ষার্থী খুশি হয়ে টাকা দিলে হতাশ করেন না তাদের। সেই অর্থ স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করেন। আবার সেই অর্থ শিক্ষার্থীদের হাত দিয়েই অসহায় দুস্থ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেন।

মেহেরপুর সরকারি উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের  ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ইংরেজিতে অনেক কাঁচা ছিলাম। এখন যা শিখেছি এখানে এসেই। এখন সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে, পড়তে এবং লিখতে পারি।

খুলনা জয় বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী ময়নুল এহেসান বলেন, করোনাকালে বাড়িতে আছি। পড়াশোনার পাশাপাশি খালিদ স্যারের প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি শিখছি। মজার বিষয় হলো ইংরেজির পাশাপাশি স্যার আমাদের নৈতিকতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে বিস্তার জ্ঞান দিচ্ছেন। আমাদের মধ্যে কেউ পড়াশোনার জন্য স্যারকে সামান্য অর্থ দিলে সেটা খুুশি মনে গ্রহণ করেন। তাকে দেওয়া সেসব অর্থ আবার আমাদের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই অসহায় দুস্থদের মাঝে বিলিয়ে দেন।

এ বিষয়ে ‘বিনা পয়সায় ইংরেজি শেখা’ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক খালিদ মোশারফ বলেন, জ্ঞান ও দক্ষতা নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের সমাজে জ্ঞানচর্চা, দক্ষতা ও সততা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াকে আলোচনার বিষয়বস্তু করে তুলতে হবে। একটি ভালো বই পড়লে তা অন্যের কাছে শেয়ার করার মতো অভ্যাস চর্চা করতে হবে। একজন শিক্ষককে কখনো কখনো শিক্ষার্থী হয়ে উঠতে হয়। অর্থাৎ শিক্ষক নিজেই শিক্ষার্থীদের কাছে কিছু শেখার চেষ্টা করবেন। এভাবে শিক্ষার্থীরাও একজন শিক্ষকের ভূমিকা পালন করবে। তবেই সমাজ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে।

নিঃস্বার্থে জ্ঞান বিলিয়ে দেওয়া শিক্ষক খালিদ মোশারফ আরও বলেন, একজন শিক্ষককে সব সময় অর্থ নিয়েই শিক্ষার্থীকে পড়াতে হবে এমনটা নয়। যার যা দক্ষতা যে কোনো স্থানে থেকেই তা ছড়িয়ে হবে। যে বিষয়ে যিনি বেশি জানেন সে বিষয়ে তিনি শিক্ষক। অতএব বসে না থেকে সেই জ্ঞানের আলো ও দক্ষতাকে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। যিনি বিত্তবান শিক্ষক প্রচুর অবসর পান কিন্তু প্রাইভেট পড়ান না। এমন শিক্ষকরা বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারেন। আর বিনা বেতনে পড়ালে ক্ষতি কী? যারা কলেজ বা ভার্সিটির শিক্ষার্থী তাদেরও উচিত বেতনে বা বিনা বেতনে জুনিয়রদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়া।

সর্বশেষ খবর