শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

মাস্কে ভাগ্যবদল রাশেদার

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

মাস্কে ভাগ্যবদল রাশেদার

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী রাশেদা বেগম। একজন গৃহিণী হলেও ভাঙা একটি সেলাই মেশিনের সাহায্যে চলে অভাবের সংসার ও দুই সন্তানের পড়াশোনা। তবে করোনা বদলে দিয়েছে সেই দৃশ্যপট। গ্রামের দরিদ্র সেই রাশেদা বেগম মাস্ক বিক্রি করেই হয়েছেন স্বাবলম্বী।

জীবনের পথটা মসৃণ ছিল না রাশেদার। দরিদ্র পরিবারের সন্তান রাশেদা। ফলে পেরোতে পারেননি স্কুলের পড়াশোনা। দরিদ্র বাবা বিয়ে দিয়ে দেন রাশেদার। তবে বিয়ের পরও কাটেনি অভাব। এর মধ্যেই দুই সন্তানের জননী হন রাশেদা। স্বামী-সন্তান নিয়ে ভালো থাকার আশায় ২০১৬ সালে বাবা-মায়ের জমি বিক্রি করে ও ঋণ নিয়ে স্বামী ফারুক হোসেনকে বিদেশে পাঠান রাশেদা। সেই থেকে স্বামীর কোনো খোঁজ পাননি। সংসারের বোঝা বইতে না পেরে দুই ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। এরপর শুরু হয় নতুন জীবন। নিজের ও সন্তানদের খরচ চালাতে নেমে পড়েন রোজগারে। তখনই সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও হানা দেয় করোনাভাইরাস, বন্ধ হয়ে যায় রাশেদার আয়ের পথ।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার যখন মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে তখনই মাস্ক তৈরির চিন্তা করেন রাশেদা বেগম। সেলাইয়ের কাজ আগেই জানা ছিল তার। এরপর একটা সেলাই মেশিন জোগাড় করে নেমে পড়েন জীবিকা নির্বাহে। শুরু করেন মাস্ক তৈরি এবং বিক্রি।

রাশেদা বেগম বলেন, মাস্ক তৈরির আগে নকশা তুলতাম খাতার কাগজ বা পুরান কাপড় কেটে। প্রথম দিন বাজার থেকে ৬০ টাকা দরে দুই গজ মোটা সুতি কাপড় কিনে ২০টা মাস্ক তৈরি করি। সেগুলো রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করি ৩০ টাকায়। ওই দিন আয় হয় ৬০০ টাকা। সেই টাকায় পরদিন ১০ গজ কাপড় কিনে মাস্ক  তৈরি ও বিক্রি করে আসে ৩ হাজার টাকা। এভাবেই বাড়তে থাকে বিকিকিনি।

রাশেদা বেগম আরও বলেন, কিছুদিন পর নতুন সেলাই মেশিন কিনে মাস্ক তৈরি করে শহরের অলি-গলি, রাস্তা, হাটবাজারে বিক্রি করতে থাকি। এভাবেই মাস্ক বিক্রির খবর ছড়িয়ে পড়ে। সে খবর চলে যায় জেলা প্রশাসকের কাছে। জনগণের মাঝে বিতরণের জন্য প্রশাসন থেকে ২ হাজার মাস্ক বানানোর অর্ডার আসে। অগ্রিম ৪ হাজার টাকাও পাই। সেই টাকায় শুরু করি কাজ।

শুধু জেলা প্রশাসন নয়, পাঁচটি উপজেলা অফিস, হাসপাতাল ও ওষুধের দোকান থেকে মাস্কের অর্ডার পান রাশেদা। অল্পদিনে কয়েকটি মেশিনও কিনে ফেলেন। এ ছাড়া লালমনিরহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশেদুল হাসানও তাকে একটি সেলাই মেশিন উপহার দেন। বাহারি ডিজাইনের মাস্ক তৈরি করে মানুষের নজর কাড়েন  রাশেদা। কাপড়ের মাস্ক বলতেই রাশেদাকে এক নামে চেনেন সবাই। মাস্ক তৈরির কাজে রাশেদার সঙ্গে কাজ করেন আরও পাঁচ নারী। বেশি অর্ডার পেলে বাড়ির পাশের সেলাইয়ের কাজ জানা নারীরাও যোগ দেন তার সঙ্গে। জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা কর্মকর্তা ফিরোজুর ইসলাম ফিরোজ বলেন, রাশেদা একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তার তৈরি মাস্ক মানসম্মত বলেই তিনি এখন স্বাবলম্বী।

সর্বশেষ খবর