শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

কোরিয়ায় বাংলাদেশি নায়ক

শনিবারের সকাল ডেস্ক

কোরিয়ায় বাংলাদেশি নায়ক

বাংলাদেশের মাহবুব আলম এখন দক্ষিণ কোরিয়ায় পরিচিত মুখ। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমেই তিনি এ পরিচিতি পেয়েছেন। ‘বান্ধবী’, ‘দ্য সিটি অব ক্রেন’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হয়েছেন। ২০১২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পুরস্কারও পেয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজে পড়াশোনা করেন মাহবুব। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় চলচ্চিত্র তৈরি এবং পরিবেশনবিষয়ক এম অ্যান্ড এম ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির সিইও। বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন ইন কোরিয়ার পরিচালক।

মাহবুব আলমের অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘মাই ফ্রেন্ড অ্যান্ড হিজ ওয়াইফ’, ‘হোয়ার ইজ রনি’, ‘পেইনড’, ‘ইউ আর মাই ভ্যাম্পায়ার’, ‘পারফেক্ট প্রপোজাল’, ‘আসুরা: সিটি অব ম্যাডনেস’, ‘লাভ ইন কোরিয়া’। এ ছাড়াও একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন।

এখন সাফল্য পেলেও মাহবুবের জীবনের গল্প এতটা সহজ ছিল না। মায়ের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে মাহবুব দক্ষিণ কোরিয়ায় যান ১৯৯৯ সালে। সেখানে পোশাক কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ শুরু করেন। সাত মাসের মাথায় মাহবুব আলমের মা মারা যান। দক্ষিণ কোরিয়ায় মাহবুবের বড় ভাই থাকতেন, তিনিও দেশে চলে আসেন। মাহবুব জীবনের তাগিদে থেকে যান দক্ষিণ কোরিয়ায়।

সম্প্রতি মাহবুব বলেন, অভিবাসী কর্মীদের নিয়ে গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবরই বেশি দেখা যায়। কর্মীদের বৈষম্য-বঞ্চনার পরিবেশ পরিবর্তনের আশায় আস্তে আস্তে অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে অংশগ্রহণ, সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত হতে থাকেন মাহবুব। তিনি বুঝতে পারেন, পথেঘাটে কেবল আন্দোলন করলেই হবে না, গণমাধ্যমেও জায়গা করে নিতে হবে।

অভিবাসী কর্মীদের নিজস্ব গণমাধ্যমের প্রয়োজনের চিন্তা থেকে মাহবুব আলম তথ্যচিত্র তৈরি করতে থাকেন। কোরিয়ার জাতীয় গণমাধ্যমে সেগুলো প্রচার ও প্রকাশ করা হয়। এর বিনিময়ে সম্মানীও পাওয়া যেত।

২০০৪ সালে মাহবুবসহ অন্য ১০টি দেশের অভিবাসী কর্মীদের উদ্যোগে ‘মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স টেলিভিশন’ যাত্রা শুরু হয় দক্ষিণ কোরিয়ায়। ২০০৬ সাল থেকে তাঁরা চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করে। এ আয়োজনের পরিচালক ছিলেন মাহবুব।

ছোট পর্দায় কোরিয়ান ভাষায় বিভিন্ন সংবাদ পাঠসহ বিভিন্ন চ্যানেলে উপস্থিত হয়ে মাহবুব আস্তে আস্তে পরিচিতি পেতে শুরু করেন।

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দ্য রোড অব দ্য রিভেঞ্জ’-এ অভিনয় করেন প্রথম। চলচ্চিত্রবিষয়ক বিভিন্ন কোর্সও করেন। এ সময় বড় পর্দায় কাজ করার ইচ্ছা জাগে তার। চলচ্চিত্র নিয়ে মাহবুব বলেন, দেশে থাকা অবস্থায় অভিনয় সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না তাঁর। ‘বান্ধবী’ চলচ্চিত্রটির মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে বড় পর্দায় অভিনয়ের যাত্রা শুরু।

২০০৮ সালের দিকে মাহবুবের ডাক পড়ে এ চলচ্চিত্রের জন্য। তবে অভিনয়ের জন্য নয়। চিত্রনাট্যের সঙ্গে অভিবাসীদের বাস্তব অভিজ্ঞতার মিল আছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব পান তিনি। পরিচালকের ইচ্ছা ছিল, অভিবাসীদের মধ্য থেকেই একজনকে নায়ক করার। যিনি কোরিয়ার ভাষা ভালো জানেন, ভিসাগত কোনো সমস্যাও নেই। মাহবুবও এ ধরনের নায়কের খোঁজ করতে থাকেন। তবে যাকেই আনা হয় পরিচালকের পছন্দ হচ্ছিল না। এসময় মাহবুব নিজেই অভিনয় করার ইচ্ছার কথা জানান।

মাহবুব বলেন, তখন শুরু হয় আসল পরীক্ষা। ১২ থেকে ১৩ কেজি ওজন কমাতে হয় তাঁকে স্বল্প সময়ে।

মাহবুব জানান, চলচ্চিত্রটির বাংলা ‘বান্ধবী’ নাম দেওয়ার পেছনেও তাঁর ভূমিকা আছে।

৩ কোটি টাকায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি একটি ভালোবাসার গল্প। একই সঙ্গে অভিবাসী কর্মীদের বিভিন্ন সমস্যাও তুলে ধরা হয়। এতে বাংলায় ছোট একটি গানও আছে।

ছয় মাস পর একটি চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বান্ধবী’র প্রিমিয়ারে মাহবুব প্রথম নিজের অভিনয় দেখার সুযোগ পান।

মাহবুব আলম বলেন, বড় বড় পোস্টারে নিজের ছবি দেখতে ভালোই লাগে। কোরিয়ার দর্শকদের অনেকেই তাঁর সঙ্গে এসে ছবি তোলেন। তিনি কোরিয়ান ভাষায় যে সংলাপ বলেছেন, তা ডাবিং কিনা, তাও জানতে চান অনেকে।

মাহবুব বলেন, বান্ধবী চলচ্চিত্রটি বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ পেয়েছে। বাংলাদেশি দর্শকসহ বিভিন্ন দেশের দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছে। তবে অনেক দর্শক জাতিগত বিদ্বেষ থেকে অপছন্দ বা ঘৃণাও করেছেন। টেলিফোনে প্রাণনাশের হুমকিও পান তিনি। তবে দমে না গিয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন মাহবুব। তিনি বলেন, ১০ কোটি টাকার বাজেটেও কাজ করেছেন তিনি। ইচ্ছা আছে আরও বড় বাজেটের চলচ্চিত্রে কাজ করার। মাহবুব বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় নায়ক হিসেবে পরিচিতি পেলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ হয়নি। তবে কয়েকজন পরিচালক তাকে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সব মিলে আমি বেশ ভালো আছি। কোনো কাজ পছন্দ না হলে সে কাজ আমি করি না। আর চ্যালেঞ্জ থাকলে সে কাজে বেশি উৎসাহ পাই।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর