শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

মেডিকেলে দেশসেরা মিশরী মুনমুন

জামশেদ আলম রনি

মেডিকেলে দেশসেরা মিশরী মুনমুন

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সারা দেশের মেধাতালিকায় প্রথম হয়েছেন পাবনার মেয়ে মিশরী মুনমুন। তার এ কৃতিত্বে পাবনাজুড়ে চলছে খুশির আমেজ। সাধারণ পরিবারের মেয়ে মুনমুনের অসাধারণ সাফল্যে ঐতিহ্যবাহী পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ সারা দেশে ফের আলোচনায় এসেছে। টানাপোড়েনের সংসারে বেড়ে ওঠেন মুনমুন। শৈশব থেকেই মনের মধ্যে সুপ্ত বাসনা ছিল ডাক্তার হওয়ার। সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে কঠোর অধ্যবসায় করেন তিনি। এর ফলও পেয়েছেন তিনি। মেডিকেলের মতো তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষায় বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মুনমুন।

মিশরী মুনমুন বলেন, ‘সন্তানকে পড়াশোনা করাতে একজন মা-বাবাকে কত কষ্ট করতে হয় তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। বাবা-মায়ের কষ্ট ঘোচাতে ও তাদের স্বপ্ন পূরণে মানুষের উপকার হবে এমন কাজ করতে চাই আমি।’ তার গ্রামের বাড়ি পাবনা শহরের রাধানগর মহল্লার নারায়ণপুরে। তার বাবা মো. আবদুল কাইয়ুম স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজে শ্রমিকের কাজ করেন। মা মুসলিমা খাতুন গৃহিণী। মুনমুনের বড় বোন চিকিৎসক। তিনি চুয়াডাঙ্গায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মেজ বোন পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজে রসায়ন বিভাগে স্নাতক শেষ বর্ষে পড়ছেন। পরিবারের সবাই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন। মুনমুনও কঠোরভাবে পর্দা করেন। সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন।

পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল জব্বার জানান, সে ছোট থেকেই মেধাবী ছিল। তৃতীয় শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যন্ত সে এখানে পড়াশোনা করে। সব সময় সে ক্লাসে প্রথম হতো।

জানা যায়, এমবিবিএস ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অর্জনকারী মুনমুনের মোট প্রাপ্ত নম্বর ২৮৭ দশমিক ২৫ (ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৭ দশমিক ২৫)। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে শিক্ষক, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন সবার প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মিশরী মুনমুন।

এবারের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছে ৪৮ হাজার ৯৭৫ জন। পাসের হার ৩৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচিত করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৫০ জনকে। এদের মধ্যে ছাত্রী ২ হাজার ৩৪১ এবং ছাত্র ২ হাজার ৯ জন। এদের মধ্যে চলমান শিক্ষাবর্ষ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৩৭ জন এবং আগের শিক্ষাবর্ষ থেকে নির্বাচিত ৪১৩ জন। গত ২ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। করোনার কারণে সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবার কেন্দ্র সংখ্যা ১৯টি এবং ভেন্যু ৫৫টি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল রবিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর।

জানা গেছে, এবার মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে মোট ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ জন পরীক্ষায় আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৯২ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন পাবনার মেয়ে মিশরী মুনমুন। তার রোল নম্বর ২৫০০২৩৮। তিনি পাবনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। মিশরী মুনমুন গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।

মেয়ের সাফল্যে দারুণ খুশি মুনমুনের বাবা মো. আবদুল কাইয়ুম। তিনি বলেন, ‘আমি সার্থক। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানাই।’

পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির মজুমদার বলেন, ‘মুনমুনের এই অভাবনীয় সাফল্যে আমরা খুবই গর্ববোধ করছি।’

মুনমুনের সাফল্যে খুশি স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজও। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. আবদুল খালেক বলেন, ‘মুনমুনের ফলাফলে আমরা সবাই খুশি। তাঁর বাবা ও তার সব বিষয়ে আমরা পাশে থাকতে চাই।

আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ মিশরী মুনমুনের মা মুসলিমা খাতুন বলেন, ‘মেয়ের এমন ফলাফলে আমরা খুবই খুশি। সবার আগে আমরা চাই সে মানুষের মতো মানুষ হোক।’ মুনমুন বলেন, সময়কে কাজে লাগানো খুবই জরুরি। তার চেয়ে অনেক অগ্রসর পরিবারের সন্তানরাও ব্যর্থ হয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, তারা সময়কে যথাযথ কাজে লাগাননি। আর কিছু নয়।

তিনি বলেন, ‘আমার চেষ্টা, শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, অভিভাবকদের সহযোগিতা সব কিছুর সম্মিলনেই তার সাফল্য এসেছে। অনেক বড় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তার।

তিনি যেতে চান অনেক দূর। এ জন্য সবার দোয়া চান। ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় দারুণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন মিশরী মুনমুন।

সর্বশেষ খবর