শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

দারিদ্র্য জয়ী নারী ফুটবলার

রিয়াজুল ইসলাম

দারিদ্র্য জয়ী নারী ফুটবলার

দারিদ্র্যকে পেছনে ফেলে শিক্ষার পাশাপাশি দেশের কৃতী ফুটবলার হয়েছেন সুবিধা বঞ্চিত একই স্কুলের আট শিক্ষার্থী। তারা সবাই এবার সুযোগ পেয়েছেন ঢাকার প্রিমিয়ার লিগে। এ ছাড়াও তিনজন ডাক পেয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ দলে এবং যমজ দুই বোন ডাক পেয়েছেন জাতীয় ফুটবল দলের।

আর এদের গড়ে তুলতে অবদান রেখেছেন দিনাজপুর শহরের ঈদগাহ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান। এ ছাড়াও ওই স্কুলের এলাকার এক ফুটবলার নুর হোসেন বেলাল একজন ভালো ফুটবলার গড়তে কোচ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

জাতীয় ফুটবল দলের ডাক পাওয়া যমজ দুই বোন হলো তনিমা ও তন্নি। তনিমা এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং তন্নি দশম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের বাবা বিপ্লব বিশ্বাস শহরের সেন্ট যোসেফ স্কুলের মালী এবং মা ওয়াইএমসিএ এর নার্সারি স্কুলের আয়ার কাজ করেন।

বাংলাদেশ পুলিশ দলে ডাক পেয়েছে ওই দুই যমজ বোনসহ তারা মনি নামে আরেক শিক্ষার্থী। তারা মনি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। বাবা অসুস্থ এবং মা রনজিনা বেগম ইটের খোয়া ভাঙার কাজ করেন।

এ ছাড়াও বাকি পাঁচজনের একজন শিখা দশম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা মৃত এবং মা ফেরদৌসি বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। হাফেজা দশম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা হাছান আলী দিন মজুরের কাজ করেন এবং মা কহিনুর বেগম স্থানীয় এক মিলে কাজ করেন। হালিমা নবম শ্রেণির ছাত্রী, বাবা মামুন আলী শেখ ভ্যানচালক এবং মা গৃহিণী। আইরিন এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। বাবা মো. হেলাল দিন মজুর এবং মা হোসনে আরা গৃহিণী। সন্ধ্যা এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। বাবা নেই এবং মা আশরাফী বেগম স্থানীয় এক প্রাইভেট ক্লিনিকে চাকরি করেন।

বাল্যবিয়ে রোধ না হওয়ায় কিংবা সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা স্কুলমুখী না হয়ে কর্মমুখী হওয়ায় দিনদিন শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়ছে। এসব ছাত্রীর কারও বাবা নেই, মা নেই কিংবা কারও দুজনই নেই, আবার কারও মা বাবা ইটের খোয়া ভাঙে, হোটেলে কাজ করেন কিংবা ভ্যান চালায় এসব পরিবারে নানা কারণে কারও বাল্যবিয়ে দেওয়া হতো কিংবা কাজ করতে যেতে হতো। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দিনাজপুর শহরের ঈদগাহ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান নিজেই বাল্যবিয়ে রোধ এবং স্কুলমুখী করতে কাজ করেন। তিনি স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাউন্সিলিং শুরু করেন, যা এখনো অব্যাহত রেখেছেন। কারণ এই স্কুলের বেশিরভ াগই দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও উৎসাহিত করেন তিনি। তাই শিক্ষার্থীদের কাছে প্রিয় প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান।

এ বিষয়ে ফজলুর রহমান জানান, সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে কাউন্সিলিংসহ নানা পদক্ষেপ নিতে হয়। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। তাদের পড়ালেখার পাশাপাশি খেলায় উৎসাহ দিতে আমি নিজেও খেলাধুলায় প্র্যাকটিস করি। এই স্কুলের মেয়েরা অনেক পুরস্কার এনেছে এবং সুনাম কুড়িয়েছে।  এবার এ স্কুলের আটজন শিক্ষার্থী ঢাকায় প্রিমিয়ার লীগে খেলার সুযোগ পেয়েছে।

তিনি আরও জানান, আন্তরিকতা থাকলে কী পেলাম আর পেলাম না,  চিন্তা না করে কাজ করলে অবশ্যই সাফল্য আসবে।

সর্বশেষ খবর