শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন

অদম্য বীর মুক্তিযোদ্ধার লড়াই

দিনাজপুর প্রতিনিধি

অদম্য বীর মুক্তিযোদ্ধার লড়াই

নীরবে-নিভৃতে দেশ ও মানুষের জন্য উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের পাশাপাশি জনসেবায় সম্পৃক্ত রয়েছেন দেশবরেণ্য চিকিৎসক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পদক’ পান গুণী এই চিকিৎসক। ১৯৫৩ সালের ৫ জুলাই দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের দক্ষিণ সুখদেবপুর গ্রামের এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম তার। দুই সন্তানের জনক অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন ও ডা. শামীমা আমজাদ দম্পতির বড় ছেলে আজমত হোসেন ইংল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে  পড়ছেন ও মেয়ে আফিয়া তাসনিম ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকে কর্মরত।

অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন ১৯৬৮ সালে চিরিরবন্দর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৭০ সালে দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের  ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি স্বেচ্ছায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তৎকালীন দিনাজপুরের কামারপাড়া, রায়গঞ্জ ও শিলিগুড়ি ক্যাম্পে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে টিম লিডার হিসেবে সরাসরি দিনাজপুর বড় গ্রাম, নিউটাউন ও রুদরানীসহ বিভিন্ন পাকিস্তানি ক্যাম্প ও স্থাপনার ওপরে গেরিলা আক্রমণ করেন। এরপর ১৯৭১ সালের ৩১ জুলাই ফুলবাড়ী ভেড়াম গ্রামে এক গেরিলা যুদ্ধে শত্রু সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন এবং তাঁর সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন শহীদ হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রক্তাক্ত আমজাদ হোসেন বালুরঘাট সরকারি হাসপাতাল এবং লক্ষ্মৌ ও বিহারের রামগড় সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেন। এরপর তিনি ১৯৭৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হতে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন ও ১৯৮৬ সালে অর্থোপেডিক বিষয়ে এম এস ডিগ্রি অর্জন করেন। চিকিৎসার সুবাদে দেখা হয় আমেরিকান চিকিৎসক ডা. আর জে গাস্টের সঙ্গে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে চিকিৎসক হয়ে ডা. গাস্টের আহ্বানে সরকারি কাজের পাশাপাশি অবৈতনিকভাবে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে দায়িত্ব পালন করেন। এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করে পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করেন। এরপরে তিনি নিটর, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০০৮ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে ল্যাবএইড স্পেশালাইড হাসপাতালে বর্তমানে কর্মরত আছেন। অর্থোপেডিক সার্জারি চিকিৎসায় তিনি বাংলাদেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসার অন্যতম কারিগর। ২০০০ সালে নিজের উপার্জিত অর্থে চিরিরবন্দরে বাবা-মায়ের নামে এবি ফাউন্ডেশন গঠন করে প্রতিষ্ঠা করেন আমেনা বাকী রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পায় আট শিক্ষার্থী।

সর্বশেষ খবর