শনিবার, ৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

সিঙ্গাপুরের হয়ে ফোর্বস-এর তালিকায় সাজ্জাদ

শনিবারের সকাল ডেস্ক

সিঙ্গাপুরের হয়ে ফোর্বস-এর তালিকায় সাজ্জাদ

বাংলাদেশের ছেলে সাজ্জাদ। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে শৈশব কাটিয়ে মাত্র ১১ বছর বয়সে পাড়ি জমান সিঙ্গাপুরে। ১৩ বছর বয়সে পেয়ে যান সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব। কাজ করছেন অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে। সবচেয়ে বড় চমক হচ্ছে তিনি এ বছর ফোর্বসের ‘৩০ অনূর্ধ্ব ৩০ (থার্টি আন্ডার থার্টি) ২০২১’ তালিকায় চলে এসেছেন। কিছুদিন আগেই ‘ফোর্বসের তালিকায় বাংলাদেশি ৯ তরুণ’ এই শিরোনামে অসংখ্য সংবাদ এসেছে বাংলাদেশের পত্রিকার পাতায়। তবে নয়জনের সঙ্গে নেই আরেকজন বাংলাদেশির নাম। তিনিই সাজ্জাদ হোসেন। কারণটা হচ্ছে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে। সাজ্জাদ বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসী শ্রমিককে ইংরেজি ভাষা শেখানোর জন্য কাজ করছেন আট বছর ধরে।

তিনি ‘সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এসডিআই) একাডেমি’ নামে সামাজিক উদ্যোগটির শুরু করেন ২০১৩ সালে।

ইংরেজি ভাষা শেখানোর পদ্ধতি নিয়ে ২০১৪ সালে সাজ্জাদ হোসেন প্রকাশ করেন ‘ড. ইংলিশ’ নামে একটি বই। পাশাপাশি অভিবাসী শ্রমিকদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন সাজ্জাদ, বোঝার চেষ্টা করেন তাদের সমস্যাগুলো এবং সমাধান খুঁজে বের করার চিন্তা করেন। এক সময় তিনি ভাবলেন, শ্রমিকদের একটা গাইডলাইনের মাধ্যমে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ করে তুলতে হবে। এই ভাবনা থেকেই পাঁচ-ছয়জনকে নিয়ে সাজ্জাদের শুরুটা হয়। প্রথমে একটা পার্কের মধ্যে বসেই সবাইকে শেখানো শুরু করেন। ধীরে ধীরে এই পদক্ষেপে সাড়া দিতে থাকেন সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। তাদের উৎসাহ দেখে সাজ্জাদ তার চেষ্টার পাশাপাশি বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে এ বিষয়ের বইপত্র এনে পড়াশোনা করতে থাকেন। দীর্ঘ আট মাস গবেষণার পর সাজ্জাদ যখন নিজেকে প্রস্তুত মনে করেন তখন একটা হলরুম ভাড়া করে আগ্রহী সবাইকে নিয়ে ইংরেজি শেখাতে শুরু করেন। এরপর আর থামতে পারেননি সাজ্জাদ। করোনার পূর্ব-পর্যন্ত সাড়ে আট হাজারের বেশি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এমনকি করোনা পরিস্থিতিতেও নিজেদের তৈরি SDI Academy নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিবাসী শ্রমিককে গুরুত্বপূর্ণ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এই অ্যাপ দিয়ে বর্তমানে ঘরে বসেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন সিঙ্গাপুরের নানা প্রান্তের ১০ হাজারেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক। সাজ্জাদ স্বপ্ন দেখেন, সিঙ্গাপুরের বাইরেও কাতার, মালয়েশিয়া, দুবাই, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত শ্রমিকদের কাছে এই অ্যাপের সেবা ছড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা তৈরিসহ আরও বিভিন্ন সেবা দিয়ে শ্রমিকদের জন্য এই অ্যাপকে একটা অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দাঁড় করানো। বিশেষ করে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য। আর এজন্যই অ্যাপটিকে আরও শক্তিশালী ও সুপার অ্যাপে পরিণত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে সাজ্জাদের এসডিআই একাডেমির টিম।

কথায় কথায় সাজ্জাদ আরও বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেশের জন্য কিছু করার তীব্র আকাক্সক্ষা ছিল। সিঙ্গাপুরে আসার পর সবসময় ভাবতাম, একটা সময় দেশে ফিরে গিয়ে দেশের জন্য কিছু করব। কিন্তু যখন দেখলাম, সিঙ্গাপুরেই আমার দেশের অনেক অভিবাসী শ্রমিক আছেন, তখন ভাবলাম, সিঙ্গাপুরে থেকেই তাদের সবদিক থেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করি। যেন তারা দেশে গিয়ে নিজেদের জন্য ও অন্যদের জন্য ভালো কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে পারে, তাদের কষ্টার্জিত টাকা সঠিকভাবে ব্যবসায় ব্যবহার করতে পারে, নিজেদের ক্যারিয়ার উন্নত করে আরও মানুষকে সাহায্য করতে পারে।

তাই ইংরেজি শিক্ষার পাশাপাশি তাদের বিজনেস ট্রেনিংও দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এভাবেই স্বপ্ন সত্যি হওয়া শুরু। এসব কিছু নিয়েই মূলত আমাদের সুপার অ্যাপের পরিকল্পনাটা সাজানো। দূরে থেকেও নিজের দেশের জন্য কিছু করে যাওয়াটা আমার স্বপ্নের বড় একটা অংশ।

সর্বশেষ খবর