শনিবার, ২৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

হ্যালোবাইকের চাকায় চলে রুনার সংসার

মো. কাবুল উদ্দিন খান, মানিকগঞ্জ

হ্যালোবাইকের চাকায় চলে রুনার সংসার

যে বয়সে রুনার বইখাতা নিয়ে পড়ায় ব্যস্ত থাকার কথা সে বয়সে সে তিন চাকার হ্যালোবাইক নিয়ে ধুলাবালি রোদ বৃষ্টিতে যাত্রীর অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। অভাবের কারণে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া শেষে কাজের সন্ধান করতে হয় রুনার। কোনো কারণে হ্যালোবাইকের চাকা না চললে সংসার অচল, হ্যালোবাইকের চাকা ঘুরলেই চলে রুনার সংসার। সংসারে একটু সচ্ছলতা আসায় ২০১৬ সালে জমি বিক্রি করে বাবা কিশোরী কন্যা রুনাকে সৌদি আরব পাঠায়। কিন্তু এক মাস পরেই রুনা পা ফসকে পড়ে মারাত্মক আহত হন। কোনো চিকিৎসা না করে রুনাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দেশে এসে চিকিৎসা করে কিছুটা ভালো হয়েই জীবনের তাগিদে হ্যালোবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সে। রুনা মানিকগঞ্জ পৌরসভার পৌলি এলাকার আলতাপ আলীর ছোট মেয়ে। হ্যালোবাইক চালক রুনা বলে পাঁচ ভাইবোন ও মা বাবা নিয়ে তাদের সংসার। দিনমজুর বাবা অনেক কষ্টে দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ভাই বউ নিয়ে আলাদা থাকেন। বাবার আয়ে সংসার আর চলে না। ২০১৬ সালে বাবা জমি বিক্রি করে আমাকে বিদেশ পাঠান। দুর্ঘটনায় পা ভেঙে গেলে আমি দেশে ফিরে আসি। অন্য কোথাও কাজ করলে মাস শেষে বেতন। কিন্তু সংসারে প্রতিদিন টাকার প্রয়োজন। তাই বাধ্য হয়ে হ্যালোবাইক ভাড়া নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। অভিমান করে রুনা বলে প্রথমে লজ্জা এবং ভয় পেতাম এখন আর সমস্যা নেই। আর লজ্জা করে লাভও নেই কেউ তো আমাকে খেতে দেবে না, আমার সংসার চালাবে না। হ্যালোবাইক ভাড়া নিয়ে পোষায় না, প্রতিদিন মালিককে ৩০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। ভাড়া পরিশোধ করে দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা থাকে। নিজের একটি হ্যালোবাইক থাকলে সমস্যা হতো না। সংসার কোনো মতে চলে যেত। সরকার বা বিত্তবানদের কাছে রুনার একটিই চাওয়া নম্বর প্লেটসহ একটি হ্যালোবাইকের। ভাড়া হ্যালোবাইক চালিয়ে সংসার চালানো খুব কষ্ট হয়।

সর্বশেষ খবর