শনিবার, ২৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অঞ্জনার গল্প

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অঞ্জনার গল্প

যার চোখের আলো নেই তাঁর কাছে পৃথিবীটা কেবল একদলা নিকষ কালো আঁধার। সেই আঁধারের মাঝে যেন এক চিলতে আলো কুষ্টিয়ার মেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অঞ্জনা রানী হালদার। অন্ধত্বকে জয় করে তিনি অর্জন করেছেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। সংগীত সাধনাতেও পিছিয়ে নেই এই প্রতিবন্ধী। অভাবের সংসারে জন্ম নেওয়া এই অঞ্জনা এখন সবার অনুপ্রেরণা। টিউশনি করে সংসারের হালধরা অঞ্জনার স্বপ্ন ভালো একটা চাকরির। কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মান্দারী হালদারের চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট অঞ্জনা হালদার। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেওয়ায় অঞ্জনার বাবা-মায়ের যেন আপসোসের সীমা ছিল না। বাবা-মায়ের নিদারুণ কষ্টের আগুনে ঘি ঢালতে ছাড়তেন না প্রতিবেশীরা। তারা নানা রকম কটূক্তি করতেন অঞ্জনাকে নিয়ে। তবুও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই সন্তানকে অতি আদরে বড় করে তোলেন বাবা-মা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় অঞ্জনাকে ভর্তি করা হয় স্কুলে। প্রতিবেশী কিংবা সহপাঠীদের অসহযোগিতা আর তুচ্ছতাচ্ছিল্যতার মধ্যেও শেষ পর্যন্ত স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। অঞ্জনা বলেন, তিনি যখন স্থানীয় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তখন প্রতিবেশীরা যেমন নানা রকম টিপ্পনী কাটত তেমনি শিক্ষকরাও কথা শোনাতে ছাড়তেন না। অঞ্জনা জানান, সে সময় এক শিক্ষক বলেছিলেন, ‘আমি এক কলম লিখে দিতে পারি এই মেয়ে কোনোদিন এসএসসি পাস করতে পারবে না।’ তবে কেবল এসএসসি নয়, অঞ্জনা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শেষ ধাপ অর্থাৎ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন কঠোর সাধনার মাধ্যমে। পাশাপাশি তিনি সংগীত চর্চাও করেন পরম যতেœ। এরই মধ্যে সংগীতে স্বীকৃতিও পেয়েছেন। অঞ্জনা বলেন, জন্ম থেকেই দরিদ্রতার সঙ্গে নিরন্তর লড়াই তার। কিছুদিন আগে সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী চা দোকানি বাবা মান্দারী হালদার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। এ কারণে সংসারে অভাব অনটন আরও বেড়েছে। কয়েকটি টিউশনি করে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করছেন তিনি। তবে অনেকেই তার কাছে ছেলেমেয়েদের পড়াতে চান না। গান শেখাতেও চান না। তাই অঞ্জনার প্রত্যাশা যোগ্যতানুযায়ী একটি সরকারি চাকরির। চাকরি পেলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে চান তিনি। অঞ্জনার বাবা মান্দারী হালদার বলেন, অনেক কষ্ট করে তার মেয়ে পড়ালেখা শেষ করেছেন। তবে মেয়ে এখনো একটি ভালো চাকরি না পাওয়ায় দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন তিনি। যে প্রতিবেশীরা এক সময় অঞ্জনাকে দেখে নাক সিটকাতো তারাও এখন তাকে সমীহ করেন।

সর্বশেষ খবর