শনিবার, ২৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

নওয়াব ফয়জুন্নেছার সেই বাড়ি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

নওয়াব ফয়জুন্নেছার সেই বাড়ি

উপমহাদেশের একমাত্র নারী নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী। তাঁর বাড়ির সৌন্দর্য দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছেন। এদিকে তিন বছর ধরে ঝুলে আছে নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ির সংস্কার কাজ। ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল বাড়িটির সংস্কার কাজ শুরু হয়। ‘ফয়জুন্নেছা স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে চালুর লক্ষ্যে সংস্কার কাজ উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের (চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান। সূত্রমতে, তাঁর বাড়িটি উন্মুক্ত জাদুঘর হিসেবে রূপান্তরিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য বাড়ির ৪ একর ৫৩ শতক জায়গা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। বাড়িটির সংস্কারে দুই কিস্তিতে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো বরাদ্দ আসে। এই বরাদ্দে অল্প কিছু সংস্কার কাজ করা হয়। পরবর্তীতে বাড়িটি সংস্কার ও বাড়ির পাশে ওয়াকওয়ে স্থাপন, সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ ও সামনের ডাকাতিয়া নদীতে কাঠের পুল স্থাপনের জন্য ২৫ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়। এ ছাড়া এটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করতে এখানে টিকিট চালুর জন্য আবেদন করা হয়। টিকিট চালুর বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে।

কুমিল্লার লাকসাম শহর থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পশ্চিমগাঁও-এ ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেঁষে নওয়াব ফয়জুন্নেছার বাড়ির অবস্থান। লাকসামের পশ্চিমগাঁও এলাকায় ১৮৩৪ সালে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী জন্মগ্রহণ করেন। নওয়াব ফয়জুন্নেছা ছিলেন জমিদার আহমদ আলী চৌধুরী ও আরফান্নেছা চৌধুরানীর প্রথম কন্যা। তাঁর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি বাংলা, আরবি, ফারসি ও সংস্কৃত ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। বেগম রোকেয়ার জন্মের সাত বছর আগে ১৮৭৩ সালে এই নারী কুমিল্লা শহরে প্রতিষ্ঠা করেন নওয়াব ফয়জুন্নেছা উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়, যা বর্তমানে ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় নামে পরিচিত। ১৯০১ সালে লাকসামে ফয়জুন্নেছা ডিগ্রি কলেজ ও বিএন হাইস্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। নারী স্বাস্থ্যসেবায় তিনি ১৮৯৩ সালে নওয়াব ফয়জুন্নেছা মহিলা ওয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নওয়াব ফয়জুন্নেছা ১৮৯৯ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজের নির্মাণ কাজে তৎকালে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন। এ ছাড়া দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, পুল, ব্রিজ, কালভার্ট ও মসজিদ নির্মাণ করেন। নওয়াব ফয়জুন্নেছা ছিলেন একজন সাহিত্যানুরাগী। তার রচিত রূপজালাল কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৮৭৬ সালে। এ ছাড়াও ফয়জুন্নেছার সংগীতসার ও সংগীত লহরী নামে দুটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়। রানী ভিক্টোরিয়া ১৮৮৯ সালে ফয়জুন্নেছাকে ‘নওয়াব’ উপাধি দিয়েছিলেন। নারী শিক্ষার প্রসারে অনন্য ভূমিকার পরও নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীকে উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়নি। ২০০৪ সালে ফয়জুন্নেছাকে যৌথভাবে একুশে পদক দেওয়া হয়। তার জীবনী পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

লাকসাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান দুলাল বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়িটি ‘ফয়জুন্নেছা স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে চালুকরণের লক্ষ্যে সংস্কার কাজ শুরু করে। যা আমাদের আশান্বিত করে। কিন্তু তিন বছরেও এটির কোনো পূর্ণাঙ্গতা আসেনি। যা আমাদের হতাশ করছে। দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করে বাড়িটি উন্মুক্ত করা হোক। এতে নতুন প্রজন্ম নওয়াব ফয়জুন্নেছার মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারবে।

সর্বশেষ খবর