শনিবার, ৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ব্রিটিশ যুবকের প্রাণ বাঁচিয়ে আলোচনায় রিফাত

যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি

ব্রিটিশ যুবকের প্রাণ বাঁচিয়ে আলোচনায় রিফাত

ক্রেতার জীবন বাঁচিয়ে যুক্তরাজ্যে হিরো বনে গেছেন বাংলাদেশি এক যুবক। বিবিসি, ডেইলি মেইলসহ ব্রিটেনের প্রভাবশালী প্রায় সব গণমাধ্যমে ওই যুবকের প্রশংসা করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই যুবক বাংলাদেশি নাগরিক।

তার বয়স ২৪। পুরো নাম শেখ নাজমুল হাসান রিফাত। ব্যাঙ্গোর তন্দুরি নামের যে রেস্টুরেন্টে ঘটনাটি ঘটেছে তার মালিক মৌলভীবাজারের ছেলে মোহাম্মদ মোস্তাকিম রাজা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রিফাত ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে আসেন। বাড়ি ঢাকার উত্তরার কামারপাড়া এলাকায়। মোস্তাকিম রাজার রেস্টুরেন্টে আড়াই বছর ধরে কাজ করছেন এই তরুণ। শ্বাসনালিতে খাবার আটকে গেলে হাইমোনিল পদ্ধতি প্রয়োগ ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে ব্যক্তিকে বাঁচানো অসম্ভব। অধিকাংশ মানুষের কাছে এটি অজানা। ‘শ্বাসনালিতে খাবার আটকানোর পর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে না পারলে চার মিনিটে মানুষ মারা যায়!’ পদ্ধতিটির আবিষ্কারকের নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে হাইমোলিক পদ্ধতি। মানুষের গলা একটা চৌরাস্তা মানে চারটি রাস্তার সংযোগস্থলের মতো। নাক দিয়ে বাতাস যায়, মুখ দিয়ে বাতাস যায়, ভিতর দিয়ে আবার দুটো রাস্তা। সামনের রাস্তাটা শ্বাসনালি, পেছনেরটা খাদ্যনালি। খাবার যাবে খাদ্যনালিতে। খাবার গেলার সময় খুব তাড়াহুড়া করলে পরিস্থিতিতে শক্ত খাবার শ্বাসনালিতে যেতে পারে। তখন বিশেষ পদ্ধতিতে পেটে নাভির অংশে চাপ দিয়ে সেই শক্ত খাবার চার মিনিটের মধ্যে বের করতে হয়। এক বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে পিঠে চাপ দিতে হয়।

রোগীর পেছনে গিয়ে কৌশল প্রয়োগকারী ব্যক্তির দুই হাত এক করে নাভিতে প্রথমে নিচে পুশ করে উপরের দিকে প্রেসার দিলে শ্বাসনালি থেকে খাবার বেরিয়ে যায়। রিফাত ওই ব্রিটিশ যুবকের প্রাণ বাঁচান ২৩ মে। সে দিনের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, একবারের চেষ্টায় শ্বাসনালি থেকে খাবার বের করতে পারেননি তিনি। অষ্টম চাপে যুবক স্বাভাবিক নিঃশ্বাস নিতে শুরু করেন। এ সময় তার বন্ধুসহ রেস্টুরেন্টে উপস্থিত অন্যরা হাততালি দিয়ে রিফাতকে অভিনন্দন জানান। অবশ্য ঘটনার শুরুতে তারা এর গুরুত্ব বুঝতে পারেননি। রিফাত স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি কাস্টমারের দিকে তাকিয়ে বুঝে ফেলেন তিনি অস্বস্তিতে আছেন। জ্যাক নামের ওই ব্যক্তির মুখ তখন লাল। চোখ দিয়ে পানি পড়ার মতো অবস্থা।’ ‘দুই থেকে তিন সেকেন্ডে রিফাত বুঝে যান ঠিক কী হয়েছে। টেবিল থেকে তাকে টেনে পাকস্থলীতে চাপ দেন তিনি। কয়েকবারের চেষ্টায় শ্বাসনালি থেকে চিকেন বেরিয়ে আসে।’ রিফাত এই কৌশল শিখেছিলেন তার বাবার কাছ থেকে। ছোটবেলায় তার বাবা এভাবে রিফাতের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। ওই ক্রেতা জীবন ফিরে পেয়ে রিফাতকে জড়িয়ে ধরেন। পরে তাকে টিপস দেন। তার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান।

রিফাত বলেন, ‘প্রথমে তিনি টিপস নিতে চাননি। কারণ তিনি একজন মুসলিম হিসেবে মনে করেন, সাহায্য করলে নিঃস্বার্থভাবে করতে হয়।’ সব শেষে রিফাত বলেন, উনি বেঁচে আছেন তাতেই আমার শান্তি।’

সর্বশেষ খবর