শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

রাফিদের বাড়ির ছাদে চিলের অভয়াশ্রম

শনিবারের সকাল ডেস্ক

রাফিদের বাড়ির ছাদে চিলের অভয়াশ্রম

আহত ও অসুস্থ চিল উদ্ধার করে চিকিৎসা দেন পুরান ঢাকার রাফিদ হক সোয়াদ। সুস্থ হলে পরে সেগুলোকে মুক্ত করে দেন আকাশে। এ জন্য বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন পশুপাখিদের অভয়াশ্রম।

ইউল্যাবের বিবিএর শিক্ষার্থী রাফিদ হক সোয়াদ। একজন পশুপ্রেমী। ছেলেবেলা থেকেই পশুপাখির প্রতি ভালো লাগা কাজ করত। আগে তার বাবা ছাদে গরু পালতেন। একসময় সেটা বন্ধ হয়ে যায়। রাফিদ জানিয়েছেন, আম্মুর শখ ছিল ছাদে বাগান করবেন। কিন্তু আমি কবুতর, খরগোশ ইত্যাদি পালা শুরু করলাম। তাই আমার বাড়ির চিলেকোঠা এখন পশুপাখিদের অভয়াশ্রম। এই চিলেকোঠায় ভিন্ন ভিন্ন খাঁচায় রয়েছে বিড়াল, খরগোশ, কবুতর ও মোরগ। বড় একটি খাঁচা চারপাশে প্রায় সাত ফুট উঁচু ও চওড়া জাল দিয়ে ঘেরা। খাঁচাটিতে রয়েছে কয়েকটি চিল। আছে পাঁচটি কুকুর ও একটি পোষা ময়না।

সাত বছর আগে কাঁটাবন মার্কেটে একটা কুকুর দেখে খুব মায়া হলো রাফিদের। স্মোকি নামের কুকুরটির গায়ে কোনো পশম ছিল না। পেছনের দুই পা প্যারালাইজড বলে দাঁড়াতেও পারত না। স্মোকিকে বাসায় নিয়ে এলেন। শুশ্রƒষা করলেন। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল কুকুরটি। এখন দৌড়াতে পারে। এরপর থেকে কুকুর-বিড়াল অসুস্থ হলে লোকজন রাফিদকে খবর দিত। পরম মমতায় সেগুলোকে সুস্থ করে তুলতেন তিনি। সেসব শেয়ার করতেন ফেসবুকে। এভাবে মানুষের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হলো তার। এরপর এলো ঈগল। হিংস্র ঈগলটি এক বন্ধুর বাসায় খাঁচায় বন্দী ছিল। কিন্তু রাফিদের মমতায় হিংস্র প্রকৃতির ঈগলটি ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে গেল। রাফিদ বলেন, বন্ধুর বাসায় ছোট্ট একটা খাঁচায় বন্দী ছিল। নড়াচড়া করতে পারত না বলে ঈগলটি এমন হিংস্র হয়ে উঠেছিল। আসলে ওরাও ভালোবাসা চায়। খাবার আর সময় দিলে পোষ মানে। পরে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে ঈগলটি ছেড়ে দিয়েছিলেন রাফিদ। এরপর চিলের শুশ্রƒষা শুরু করলেন। পুরান ঢাকায় এক লোক চিল পালতেন। কিন্তু ইলেকট্রিক শক খেয়ে আহত হয়েছে বলে চিলটি বিক্রি করে দিতে চাইলেন। রাফিদের কানে খবরটা পৌঁছালে তিনি তা কিনে নেন আড়াই হাজার টাকায়। চিলটির পাখা ও লেজের পালক ছিল না। গলায় ঘা হয়ে গিয়েছিল। ঠিকঠাক খেতে পারত না। কবুতর পালতেন বলে আগে থেকে পাখি সম্পর্কে একটা ধারণা হয়ে গিয়েছিল রাফিদের। তা ছাড়া ঈগল পালার সময় ইউটিউবে এ সম্পর্কিত অনেক ভিডিও দেখেছেন। সেসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ করে তোলেন চিলটিকে। কিছুদিন আগে ছেড়ে দিয়েছেন। আগে খবর পেলে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে চিল নিয়ে আসতে হতো রাফিদকে। এখন অনেকে নিজেই এনে দিয়ে যান। কয়েক মাস আগে মাওয়াঘাটের কাছের মাঠ থেকে একটা এনেছেন। আধমরা অবস্থায় আনা চিলটি এখন অনেকটাই সুস্থ। রাফিদ এ পর্যন্ত ১০টি চিল সুস্থ করে তুলেছেন। ছয়টিকে ছেড়ে দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। পুরোপুরি সুস্থ হলে বাকি চারটিও ছেড়ে দেবেন। সুস্থ করে তোলার জন্য অনেক সময় দিতে হয় চিলদের। ফলে ওরা বিশ্বাস করে ফেলে রাফিদকে। গিলা, কলিজা, চামড়া, হাড়, মাংস-এসব খায় চিল। কুকুর, বিড়াল, খরগোশের খাদ্য তালিকায় হাড়-মাংস ছাড়াও ডিম, পেঁপে, শাক, কুমড়া, করলা ইত্যাদি থাকে। পাঁচ কেজি মাংস আনলে তিন দিন চলে। সঙ্গে হাড়গোড় তো আছেই। মাসে হাজার পাঁচেক টাকার মতো খরচ হয়। আগে টিউশনি করতেন। কোচিংয়েও পড়াতেন। সেখান থেকে খরচের জোগান হতো। করোনায় তা বন্ধ। এখন পরিবার সাপোর্ট দেয়। এ ছাড়া ছাদে পশুপাখির মল-বিষ্ঠা রাফিদই পরিষ্কার করেন। ওদের গোসল করান। নিয়ম করে খাবার দেন। ওদের সঙ্গে সময় কাটান রাফিদ।

সর্বশেষ খবর