শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

বিনামূল্যের পাঠশালা

মহিউদ্দিন মোল্লা

বিনামূল্যের পাঠশালা

বাড়ির উঠান। উঠানের গাছতলায় বিনামূল্যের পাঠশালা। চলছে প্রায় এক দশক ধরে। নীল আকাশ তাদের ছাদ আর প্লাস্টিকের বস্তা তাদের বেঞ্চ। সেখানে ৭২ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত পড়ে। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার দক্ষিণ খোসবাস ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে এই পাঠশালার অবস্থান। এই পাঠশালার কারণে গ্রামে ঝরে পড়ার হার কমেছে। এ ছাড়া করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময়েও তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাঘাত হয়নি।

গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হোসেনপুর ছোট গ্রাম। গায়ে গায়ে লাগানো ছোট ঘর। অধিকাংশ বাসিন্দার পেশা কৃষি ও শ্রম বিক্রি। তাদের সন্তানদের নিয়ে চলছে গাছতলার পাঠশালা। শিক্ষকরা পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন। কেউ লিখছেন, কেউ মাথা দুলিয়ে পড়ছেন। পাঠশালাটির উদ্যোক্তা ওই গ্রামের সন্তান ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ইলিয়াস হোসাইন। বর্তমানে তার পেশা ফটোগ্রাফি।

ইলিয়াস হোসাইন বলেন, একজন মেয়ে আছে, নাম মিলি (ছদ্মনাম)। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। পড়ালেখার প্রবল ইচ্ছা। মা-বাবা  মাঝেমধ্যে বিয়ে দিতে চান। উৎসাহ দিয়ে এখন পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। সুবর্ণা, আকলিমা নামের এমন আরও শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা শ্রমিক পরিবারের। পরিবারের শিক্ষা দেওয়ার আগ্রহ নেই। ওরা প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে আজ অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ওদের কেউ কেউ শিক্ষক হতে চায়। ভালো চাকরি করবে। পরিবারের দারিদ্র্যতা দূর করবে।

তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগরপাড় পার্কের ভিতর অবকাশ ছাউনিতে ১৩ জন পথশিশুকে পড়ানো দিয়ে শুরু। তারপর খেয়াল করলাম নিজের গ্রামের অনেক মানুষ আছে সন্তানকে টাকার অভাবে পড়াতে পারছেন না। ৫ম শ্রেণিতে উঠেই শিশুদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই অবকাশের দ্বিতীয় শাখা বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত করি। গ্রামে শুরু করি ২০১৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। ২০ জন শিশু এবং ১০ জন শিক্ষক দিয়ে যাত্রা শুরু। প্রথমে মসজিদের মাঠে ও স্কুলের বারান্দায়। পরে বাড়ির উঠানে শিশুদের পড়ার স্থান নির্ধারণ করি। এখন পর্যন্ত বাড়ির উঠানেই পড়াচ্ছি। বর্তমানে শিশুর সংখ্যা ৭২ জন। ওরা বিভিন্ন স্কুলে পড়ে। এখানে শিশু শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিশু আছে। বিকাল হলেই সবাই ব্যাগ কাঁধে পড়তে চলে আসে। ওদের প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত পড়ানো হয়। এখন করোনা মহামারীর কারণে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের দুটি শাখায় ভাগ করে দিয়েছি। একটা শাখা ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত। দ্বিতীয়টি ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত। এই শিশুদের এখান থেকেই খাতা-কলম, ব্যাগসহ সব ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়। ঈদের আনন্দ থেকে যাতে বঞ্চিত না হয়, তাই শিশুদের খুশি করার জন্য প্রতি ঈদে নতুম জামা-কাপড় দেওয়া হয়। শীতের মৌসুমে সমস্যা হয় না। বর্ষায় উঠান ভিজা থাকার কারণে বসতে পারে না, তাই বৃষ্টির দিন বন্ধ থাকে। যদি তাদের জন্য একটা ঘর এবং জায়গা পেতাম তাহলে সুবিধা হতো। পরিচালনার আর্থিক জোগানটা করে থাকি নিজের অর্থ এবং ফেসবুকসহ বিভিন্ন বন্ধু মহলের সহযোগিতায়। তিনি আরও বলেন, শুরুর দিকে গ্রামের যারা নেতিবাচক আচরণ  করেছিল এখন তাদের সন্তানও এখানে পড়তে আসে। বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুল ইসলাম বলেন, শিশুদের ব্যক্তি উদ্যোগে বিনাশ্রমে পড়ানো অবশ্যই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এক দিন তাদের কাজ পরিদর্শন করব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর