শনিবার, ৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

পিংকুর রং তুলিতে জীবনের ক্যানভাস

মাহমুদ আজহার

পিংকুর রং তুলিতে জীবনের ক্যানভাস

শৈশবকাল থেকেই ছবি আঁকার ঝোঁক ছিল এ এইচ এম মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকুর। স্কুলজীবনেই এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ফরিদপুর হাইস্কুলে পড়ার সময় অবিভক্ত ফরিদপুর জেলার আন্ত স্কুল ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় শীর্ষ অবস্থানে ছিলেন পিংকু। খেলাঘর সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে বিভিন্ন ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে বেশ কয়েকটি সম্মাননা সার্টিফিকেট অর্জন করেন এই শিল্পী। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের গোয়ালচামটে। আদি পৈতৃক বাড়ি গোপালগঞ্জের চন্দ্রদিঘলীয়ায়।

করোনাকালেও মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকুর রং তুলিতে উঠে আসছে জীবনের ক্যানভাস। ঢাকার পান্থপথের বাসা এবং ফরিদপুরের গ্রামের বাড়িতে ঘরভর্তি শোভাবর্ধিত করে আছে শত শত জীবন্ত ছবি। শখের বশেই ছবি আঁকেন। ছবি আঁকা ঘিরেই তার ধ্যান-জ্ঞান। তার রং তুলিতে ফুটে উঠেছে গ্রামবাংলার জীবনচিত্র। বর্ষাকালীন পাহাড়ের দৃশ্য কিংবা কংক্রিটের শহুরে জীবনের চিত্রও ফুটে উঠেছে তার ক্যানভাসে। সময় পেলেই ছবি আঁকতে বসে যান পিংকু। পিংকুর সংগ্রহে আছে দেশি-বিদেশি বাহারি রং ও তুলি।  জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে নানা ব্যস্ততার মধ্যেও নিয়মিত ছবি এঁকেই যাচ্ছেন এই চিত্রশিল্পী। ছবি আঁকা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু জানালেন, ‘আমি আপাতত জাতীয় পর্যায়ে একটা চিত্র প্রদর্শনী করতে চাই। এরপর আমার আঁকা ছবি বিশেষ করে আমাদের ইতিহাস, কৃষ্টি-কালচার, প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে চাই। আমরা যে একটা সোনার দেশে জন্মেছি, সেটা উপস্থাপন করে জাতিকে বিশ্ব দরবারের আরও সন্নিকটে নিয়ে যেতে চাই। সেক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ, এই কর্মযজ্ঞের সঙ্গে অর্থের একটা বিরাট সম্পর্ক বিদ্যমান।’

১৯৭৭ সালে বিটিভি আয়োজিত জাতীয় শিশু কিশোর প্রতিযোগিতা ‘নতুন কুঁড়ি’তে অংশ নিয়ে জাতীয় সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন পিংকু। একই বছরে ইউনেস্কো আয়োজিত সারা পৃথিবীর শিশু কিশোরদের পাঠানো ছবি প্রতিযোগিতায় বিশেষ সার্টিফিকেট লাভ করেন তিনি। ১৯৮৪ সালে ঢাকা আর্ট কলেজে ভর্তি হন। অর্থনৈতিক কশাঘাতে জর্জরিত পিতৃহারা পরিবার থেকে উঠে আসা যুবক বয়সে অবলম্বনহীন অবস্থায় ঢাকা আর্ট কলেজে ভর্তি হলেও অভাব অনটন এতটাই পীড়া দিয়েছিল যে, ঢাকায় থেকে পড়াশোনার খরচ মেটানোও ছিল অনেক কষ্টসাধ্য। লেখাপড়ায় সহযোগিতা করার জন্য পিতৃহারা অসহায় পিংকুর জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। এরই মধ্যে শুরু হয় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। টগবগে তরুণ ছাত্রাবস্থায় আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন পিংকু। এক পর্যায়ে স্বৈরাচারের  জুলুম নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে পড়াশোনা ছেড়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে চলে যান দেশের বাইরে। কয়েক বছর পর দেশে ফিরে এলেও আর্ট কলেজে আর অসমাপ্ত পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি পিংকু। জীবিকার তাগিদে চলে যান নিজ জেলা ফরিদপুরে। কিন্তু রং তুলি  ভুলেননি পিংকু।

সর্বশেষ খবর