শিরোনাম
শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সুলতান-কোহিনুরের সংগ্রামের গল্প

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

সুলতান-কোহিনুরের সংগ্রামের গল্প

সুলতান আহমেদ ও কোহিনুর বেগম। এ দম্পতির দৃষ্টিশক্তি নেই। দৃষ্টিহীন বলে থেমে থাকেননি তারা। নিজেদের  জগৎ নিজেরা সাজিয়ে নিয়েছেন। তবে এর জন্য তাদের অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পথ চলতে হয়েছে। দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। রয়েছে সংগীতের ওপর ডিগ্রি। তারা গানও ভালো গাইতে পারেন। সুলতান আহমেদ কুমিল্লা আদালতের আইনজীবী। কোহিনুর বেগম গৃহিণী। তিনি দুই ছেলের দেখাশোনা করেন। নগরীর কাপ্তান বাজারে তাদের বসবাস। বাসায় গিয়ে দেখা যায়, সুলতান আহমেদ কম্পিউটারে কাজ করছেন। রান্নায় ব্যস্ত কোহিনুর বেগম। বড় ছেলে সাফায়েত আহমেদ অনার্সে পড়েন। ছুটিতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ছোট ছেলে শাহাদাত আহমেদ নবম শ্রেণিতে পড়ে। সুলতান আহমেদের মক্কেলের ফোন এসেছে। আদালতে যাওয়ার তাড়া।

সুলতান আহমেদের জন্ম কুমিল্লা সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম অরণ্যপুরে। বাবা সুরুজ মিয়া কৃষক। মা আনোয়ারা বেগম গৃহিণী। তারা পাঁচ ভাই তিন বোন। আট মাস বয়সে টাইফয়েডে চোখ হারান। অন্য সব ভাই-বোনের শারীরিক কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তাকে অনেকে একসময় পরিবারের বোঝা মনে করলেও তিনি ব্যতিক্রম। পরিবারের মধ্যে তিনিই একমাত্র স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। শহরে নিজের আয়ে পরিবার চালানোর সঙ্গে বাবা-মাকেও সহায়তা করেন। তার জন্য উজ্জ্বল হয়েছে পরিবারের মুখ।

এরপর কথা হয় কোহিনুর বেগমের সঙ্গে। বাবা চাঁন মিয়া পুলিশে চাকরি করতেন। মা আনোয়ারা বেগম গৃহিণী। বাড়ি গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলার বড় ভোলা গ্রামে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট সংঘ অন্ধ বালিকা বিদ্যালয়ে পড়েছেন। ঢাকা ইডেন কলেজে পড়তে গেলে তখনকার প্রিন্সিপাল জাহানারা হক বলেন, এখানে ৮-৯ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের ধাক্কায় তুমি পড়ে যাবে। খলিলুর রহমান নামে তার পরিচিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বড় ভাই বুঝিয়ে বললে তিনি রাজি হন। প্রিন্সিপাল তাকে বলেন, তুমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তা বুঝতে একটি টুপি বানিয়ে দেব। পরে তার আর টুপির প্রয়োজন হয়নি। সবার সঙ্গে তিনি মিশে গেছেন।

সুলতান আহমেদ বলেন, বাবার এক মামির অনুপ্রেরণায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হই। সেখানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ রয়েছে। পড়ার সময় অনেক প্রতিবেশী হাসি ঠাট্টা করত। যে চোখে দেখে না তার লেখাপড়া দিয়ে কী হবে? স্কুলের ফরিদা আক্তার নামে শিক্ষক তাকে সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন। বিয়ের বিষয়ে বলেন, পড়া অবস্থায় বিয়ে করি। কুমিল্লায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের হোস্টেলে ২ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি পাই। ২০০২ সালে কুমিল্লার আদালতে কাজ শুরু করি। প্রথম কাজ পেয়েছি চট্টগ্রাম আদালতে। আগে অনেকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখলেও এখন তাকে স্নেহ করেন। কোহিনুর বেগম বলেন, আমাদের গানের ওপর ডিগ্রি আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে পরিচয় হয়। প্রথমে ভাবলাম স্বাভাবিক ছেলে বিয়ে করব। পরে মনে হলো তার কাছে সম্মান পাব না। আমার পরিবার রাজি হলেও সুলতানের পরিবার প্রথমে রাজি হয়নি। কারণ আমরা দুজনেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। বর্তমানে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখেই আছি।

 

সর্বশেষ খবর