শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
স্বেচ্ছাসেবা

ভালো কাজের হোটেলে বিনামূল্যের খাবার

প্রতিদিন প্রায় ৭০০-৮০০ মানুষের জন্য খাবার রান্না হয়। খাবার দেওয়ার আগে তাদের নাম, বয়স, কী কী ভালো কাজ করলেন তা লিখে রাখা হয়। কেউ যদি মিথ্যা কথা বলেন তাকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। তাকে বোঝানো হয়, সত্য কথা বলাও একটা ভালো কাজ।

জামশেদ আলম রনি

ভালো কাজের হোটেলে বিনামূল্যের খাবার

আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছেন যাদের কাছে একবেলা খাবার খাওয়া স্বপ্নের মতো। খাবারের যন্ত্রণায় ভোগা এসব মানুষ জানেন একবেলা খাবার তাদের কাছে কতটা দামি। সেজন্যই কিছু তরুণের স্বেচ্ছাসেবায় একবেলা পেট ভরে আহারের সুযোগ মিলছে রাজধানীর একটি হোটেলে। এ জন্য প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো কাজ করতে হবে। ব্যতিক্রমী এই খাবারের হোটেল গড়ে উঠেছে ঢাকার কমলাপুর বাসস্ট্যান্ডে। আরিফুর রহমান সিহাবের পরিচালনায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এই হোটেলে কাজ করে থাকেন। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এলাকার দুস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে তারা রাতের খাবার পরিবেশন করেন। কেবল টোকাই কিংবা কুলির কাজে যুক্ত পথশিশু নয়; অসহায় দরিদ্র রিকশাচালক কিংবা উদ্বাস্তু প্রাপ্তবয়স্ক মানুষও ভালো কাজের বিনিময়ে সেখান থেকে খাবার খেতে পারেন।

সরেজমিন দেখা যায়, কমলাপুর বাসস্ট্যান্ডে বসে অনেক মানুষ খাবার খাচ্ছেন। কিছু ছেলেমেয়ে তাদের খাবার পরিবেশন করছে। অনেকে আনন্দ করেই খাচ্ছিলেন। কথা বলে জানা গেল, স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটির সদস্যদের একটি ব্যাংক দেওয়া হয়। তার মধ্যে প্রতিদিন ১০ টাকা করে জমা করে বা মাসে ৩০০ টাকা দিতে হবে। একটি ভালো কাজের বিনিময়ে রাতের খাবার খাবেন এমন দুস্থ বা অসহায় মানুষের জন্য আরিফ রহমান সিহাব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় কয়েক বন্ধু মিলে শুরু করেন এই হোটেল।

এখন তাদের বাসাবোতে একটি অফিসও রয়েছে। সিহানুর রহমান আসিফ, সাকিব হাসান শাওন, ফারুক আহমেদ, মনিরুজ্জামান মনির, রুবেল আহমেদ হিমেলসহ অনেকেই এ কাজে যুক্ত রয়েছেন। তাদের সহায়তা করছে স্কুল ও কলেজের অনেক শিক্ষার্থী। তারা বাসাবোতে একটি স্কুলে রান্না করে প্রতিদিন দুস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করছেন। শর্ত হিসেবে প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো কাজ করতে হবে। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর তারা খাবার দিয়ে থাকেন কমলাপুর বাসস্ট্যান্ডে। শুক্রবার তারা বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসায় খাবার পরিবেশন করেন।

ভালো কাজের হোটেলের সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক সাকিব হাসান শাওন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০১২ সাল থেকেই ভালো কাজের বিনিময়ে আমরা খাওয়ানোর এ কার্যক্রম শুরু করি। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে আমরা সপ্তাহে এক দিন করে খাওয়াতাম। পরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে প্রতিদিন খাওয়ানোর কার্যক্রম শুরু হয়। 

জানা যায়, ২০০৯ সালে বিশেষ কয়েকটি দিনে এ ধরনের আয়োজন হতো। ২০১৯ সাল থেকে প্রতি শুক্রবার করা হয় আয়োজন। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউন শুরু হলে প্রতিদিন একবেলা করে খাবারের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর পাঁচটি পয়েন্টে খাবার বিতরণ করা হয়। কমলাপুর, সদরঘাট, ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর, বনানী কবরস্থান এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশন। এসব জায়গার মধ্যে কমলাপুরে  প্রতিদিন সন্ধ্যা বা রাতে খাবার দেওয়া হয়। বাকি চারটি স্থানে সপ্তাহে এক দিন খাবার বিতরণ করা হয়। শাওন বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৭০০-৮০০ মানুষের জন্য খাবার রান্না হয়। খাবার দেওয়ার আগে তাদের নাম, বয়স, কী কী ভালো কাজ করল তা লিখে রাখা হয়। কেউ যদি মিথ্যা কথা বলে তাকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। তাকে বোঝানো হয় সত্য কথা বলাও একটা ভালো কাজ। লিখে রাখা তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে তাদের উৎসাহ দেওয়া হয় ভালো কাজ করার।

কী ধরনের ভালো কাজ বেশি দেখা যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্ধ বা শিশুকে রাস্তা পারাপারে সহায়তা, রিকশা ভাড়া না নিয়ে অসহায় মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু বিশেষ করে কাচের টুকরো, ইট- পাথর, পিন সরিয়ে ফেলা এবং কাঁধে বোঝা বহন করতে কষ্ট হলে সহায়তা করার মতো অনেক ভালো কাজ করেন অনেকে।   তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে সাকিব হাসান শাওন বলেন, ‘বর্তমানে সীমাবদ্ধতা থাকলেও আগামীতে কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়ানোর ইচ্ছা রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর