শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
মজিবুর রহমান স্মৃতি গ্রন্থাগার

নওগাঁ সীমান্তে জ্ঞানের আলো

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁ সীমান্তে জ্ঞানের আলো

নওগাঁর সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এক গ্রামে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ‘মজিবুর রহমান স্মৃতি গ্রন্থাগার’। প্রতিদিন পাঠাগারে জ্ঞান অর্জন করতে আসেন নানা বয়সী মানুষ ও তরুণ শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে পাঠাগারটি এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। শিক্ষার্থীদের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নেওয়া হয়েছে নানামুখী উদ্যোগ। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে মুক্তিযুদ্ধ, পরিবেশ ও শিশু কিশোরদের শিক্ষণীয় চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারি দেখানো হয়।

এ ছাড়াও মাসিক ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত প্রদান করে ‘লাইব্রেরি বন্ধু’ নামে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। যাতে লাইব্রেরি কাজের সঙ্গে বইপ্রেমীরা যুক্ত হতে পারেন। এ ছাড়াও অনলাইন কবিতা, গল্প লেখা ও বুক রিভিউ প্রতিযোগিতা শুরু করা হয়েছে এবং বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

নওগাঁর সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুণ ইউনিয়নের আগ্রাদ্বিগুণ বাজারে পাঠাগারটি অবস্থিত। সীমান্তবর্তী এলাকার আগামী প্রজন্মকে মাদক থেকে বাঁচাতে এবং শিক্ষামুখী করতে নিজ উদ্যোগে পাঠাগারটি তৈরি করেছেন আলমগীর কবির। বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে এবং মানবিক মানুষ গড়ার লক্ষ্যে তিনি এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আমেরিকান একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত আছেন তিনি। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন গ্রিন ভয়েস বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঠাগারটিতে টেবিল, সেলফ ও আলমারিতে থরে থরে সাজানো রয়েছে হাজারো বই। পাঠাগারটিতে শোভা পাচ্ছে ইতিহাস, প্রবন্ধ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, গল্প, মুক্তিযুদ্ধ, ছোট গল্প, ইসলাম, জীবনী, খেলাধুলা, শিশুতোষ, ঐতিহ্যসহ প্রায় চার হাজারের মতো বই। আরও আছে মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা।

পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর কবির বলেন, আধুনিক সভ্যতার এই সময়ে সবাই কেমন বই পড়া থেকে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি একজন মানুষকে মানবিক হিসেবে তৈরি করার ক্ষেত্রে পাঠাগারের বিকল্প নেই। বর্তমানে প্রযুক্তিতে আসক্ত ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের বহরে আগ্রহ কম। ফলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা তৈরি করতে চাইলে শিল্প সাহিত্য ও পড়াশোনা করতে হবে। তাই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। মানুষ যদি বই পড়ে তার মধ্যে বোধ এবং চেতনা জন্মগ্রহণ করবে। তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হবে। জ্ঞান চর্চার অভাবে আমাদের সমাজে প্রগতিশীল চিন্তাধারার মানুষের বড়ই অভাব। আমার এই চিন্তা থেকেই নিজ এলাকার ছেলে মেয়েদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এমন উদ্যোগ নিয়েছি। স্থানীয় আগ্রাদ্বিগুণ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেনজির আহমেদ বলেন, এটি অনেক মহৎ একটি উদ্যোগ। একটি পাঠাগারের যে ধরনের পরিবেশ থাকা দরকার তার সবই সেখানে বিদ্যমান। পাঠাগারটি সময়োপযোগী হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। আমি নিজেও অবসর সময়ে পাঠগারে গিয়ে বই পড়ি। আমার শিক্ষার্থীদেরও পাঠাগারে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি এবং তারা নিয়মিত সেখানে বই পড়েন। ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার গণপতি রায় বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় এমন একটি পাঠাগার সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। পাঠাগারটি স্থাপন করায় আলমগীর কবিরকে ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি পাঠাগারে শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী মানুষ আসবে বই পড়বে। মাদক, সন্ত্রাস ও বাল্যবিবাহ থেকে দূরে থাকবে।

সর্বশেষ খবর