শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
অনুপ্রেরণীয়

গাছের মা তুলসী গৌড়া

শনিবারের সকাল ডেস্ক

গাছের মা তুলসী গৌড়া

বেশ কদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। নিজ সম্প্রদায়ের খাটো শাড়ি আর খালি পায়েই ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কার গ্রহণ করেছেন একজন প্রৌঢ়া নারী। তিনি তুলসী গৌড়া। সামাজিক কার্যের জন্য ভারত ছাপিয়ে এখন তিনি বিশ্বের মানুষের কাছে আলোচনার কেন্দ্রে। ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের হান্নালি গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব এই নারী ‘গাছের মা’ বলে পরিচিত। তাকে গাছের এনসাইক্লোপিডিয়া বলেও আখ্যায়িত করা হয়। কারণ কোনো রকম প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াই গাছগাছালির খুঁটিনাটি সম্পর্কে তার রয়েছে অগাধ জ্ঞান।

ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের লাল কার্পেটের ওপর দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে আসছেন সত্তরোর্ধ্ব মহিলা। সাদামাটা অথচ দাপুটে। অমায়িক কায়দায় সবার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে গ্রহণ করলেন পদ্মশ্রী পুরস্কার। এ দৃশ্য দেখে আপ্লুত বিশ্ববাসী। নেট দুনিয়ায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি চর্চিত নাম তুলসী গৌড়া। আদিবাসী শাড়ি পরিহিত তুলসীর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ের ছবিটিও ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। খোদ নরেন্দ্র মোদিও টুইট করেছেন ওই ছবিটি।

তুলসীকে নিয়ে এক টুইট-বার্তা দিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়। টুইটে বলা হয়েছে, গাছ লাগিয়ে ছয় দশক ধরে পরিবেশ সংরক্ষণে অবদানের জন্য তুলসীর হাতে পদ্মশ্রী পুরস্কার তুলে দিয়েছে ভারত সরকার।

ভারতের কর্ণাটকের হালাক্কি সম্প্রদায়ভুক্ত তুলসী গৌড়াকে বলা হয় অরণ্যের এনসাইক্লোপিডিয়া। বিশ্বের প্রায় সব ধরনের গাছ সম্পর্কেই তুলসীর রয়েছে অগাধ জ্ঞান। গাছের গুণাগুণ থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, সবটাই তাঁর নখদর্পণে।

৭২ বছর বয়সী তুলসী গৌড়া বরাবরই প্রকৃতিপ্রেমী। গাছের সঙ্গে তার দারুণ সখ্য। একেবারে কিশোরকাল থেকেই গাছ লাগানো আর পরিচর্যাকে অভ্যাসে পরিণত করেন তুলসী। এরপর ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি বৃক্ষ রোপণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ করে চলেছেন। তিনি নিজ হাতে ৩০ হাজারেরও বেশি গাছ রোপণ করেছেন। শুধু গাছ রোপণ করেই তিনি থামেননি, মায়ের মতো সন্তানস্বরূপ গাছগুলোকে বড় করেছেন।

তুলসী গৌড়ার মা বন অধিদফতরের দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মী ছিলেন। খুব অল্প বয়সে বাবাকে হারানো তুলসীকে তাই ছোটবেলা থেকেই করতে হয়েছে রোজগারের চিন্তা। প্রথমে কাজ শুরু করেন মায়ের নার্সারিতে। এ কারণে স্কুলের আঙিনায় পা রাখার সুযোগ হয়নি তার। মাত্র ১২ বছর বয়সে তুলসী গৌড়া বন অধিদফতরের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেন। বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণের প্রতি তাঁর ঝোঁক মুগ্ধ করেছিল বন অধিদফতরের কর্তাব্যক্তিদের। তাই তারা তুলসীকে বন অধিদফতরের নার্সারিতে স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।

বন অধিদফতরের চাকরি থেকে তুলসী গৌড়া অবসর নিয়েছেন এক দশক আগে। তবে সরকারিভাবে তাঁর গাছ লাগানো থেমে গেলেও থেমে যায়নি তাঁর দুটি হাত। এখনো মানুষটিকে সকাল হলেই দেখা যায় গাছের চারা হাতে নিয়ে কোনো এক বৃক্ষহীন প্রান্তরের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। গাছ লাগানো আর পরিচর্যার মাঝেই তুলসী খুঁজে পান জীবনের প্রকৃত আনন্দ। আমৃত্যু এ কাজটিই করে যেতে চান তিনি। পদ্মশ্রী পাওয়ার আগে তুলসী গৌড়া সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তবে এসব পুরস্কার তার কাছে গৌণ। তাঁর কাছে মুখ্য বিষয় হচ্ছে গাছ লাগানো, সেগুলোর যত্ন নেওয়া।  কারণ গাছ ও সন্তান তার কাছে ভিন্ন কিছু নয়। এমনকি পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্তির তালিকায় তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর অসংখ্যবার তিনি গণমাধ্যমকে এই কথাটিই বলেছেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর