শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
শিল্প-ঐতিহ্য

মারিয়ার ভাস্কর্যে প্রাণ-প্রকৃতির কথা

গৌতমাশিস গুহ সরকার, গাইবান্ধা

মারিয়ার ভাস্কর্যে প্রাণ-প্রকৃতির কথা

নতুন প্রজন্মের ভাস্কর আসমাউল হুসনা মারিয়া।  তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা গাইবান্ধা শহরে। ছোটবেলা থেকেই শিল্প-সংস্কৃতিকে লালন করে আসছেন।  ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত পঞ্চম জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী ২০২১-এ এবার শ্রেষ্ঠ শিল্পীর দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তার এই পথচলায় পাশে পেয়েছেন পরিবারের অকুণ্ঠ সমর্থন। ব্যবসায়ী মাহাবুবুল আলম এবং গৃহিণী হোসনে আরা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান মারিয়া।

দেশ, মানুষ, প্রকৃতির প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ এই শিল্পীর। চলতি বছরের মে মাসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা শুরু হয় এবং জুলাই মাসে চট্টগ্রামে সিআরবির শিরীষতলায় শতবর্ষী গাছ কেটে হাসপাতাল তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ দুটি ঘটনায় পরিবেশবিদ, নগরবিদ, প্রকৃতিপ্রেমীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ প্রতিবাদ জানায়। এই গাছ কাটার বিষয়টি ভাস্কর আসমাউল হুসনা মারিয়াকেও নাড়া দেয়। এ বিষয়টিকেই তিনি উপজীব্য করে ‘শিরোনামহীন’ নামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। যেটি এবার তাকে শ্রেষ্ঠ শিল্পীর মর্যাদা এনে দেয়। ভাস্কর মারিয়া বলেন, ‘শিরোনামহীন’ নামের শিল্পকর্মটি কাঠ ও লোহার মাধ্যমে তৈরি করেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গাছ বা বনায়নের অত্যাবশ্যকীয় গুরুত্ব ভাস্কর্যটিতে তুলে ধরা হয়েছে। বড় শহরগুলোর উদ্যান ও গাছপালা শহরের মানুষের স্বস্তির জায়গা। কিন্তু এই গাছগুলো এখন নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য হুমকির মুখে। গাছের প্রতি মর্মান্তিক ও নিষ্ঠুর আচরণ আমাকে ব্যথিত করে। আমার শিরোনামহীন ভাস্কর্যটি সেই আঘাতপ্রাপ্ত অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ।

মারিয়া বলেন, এবারের প্রদর্শনীতে ১৩৫ জন শিল্পীর মোট ২৫৪টি শিল্পকর্ম জমা পড়ে। বাছাই শেষে ১০৭ জন শিল্পীর ১১৪টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচিত হয়। জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে আগে পাঁচজন শিল্পীকে পুরস্কার দেওয়া হলেও এবার ১৩ জন শিল্পীকে পুরস্কৃত করা হয়। এর মধ্যে আমি দেড় লাখ টাকা মূল্যমানের দ্বিতীয় পুরস্কার অর্জন করেছি। এটি আমার ভবিষ্যতের কাজের প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।’ মারিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালেই ছবি আঁকার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। গাইবান্ধা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। পরিবার চেয়েছিল ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ছাত্রী হিসেবে মারিয়া বিবিএ পড়বেন। কিন্তু মারিয়ার আকর্ষণ ছিল চারুকলায় পড়াশোনা করার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় ভাস্কর্য বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এখন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বৃত্তি নিয়ে সেখানেই পড়াশোনা করছেন।

সর্বশেষ খবর